গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত ৩০ জন

SHARE

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহরে খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (১ জুন) ওই ঘটনায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ১৬৯ জন আহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাফাহর আল-আলম জেলায় খাদ্য সহায়তা বিতরণকেন্দ্রের কাছে হাজারো মানুষ জড়ো হলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়। আহতদের অনেকের শরীরে গুলির ও শার্পনেলের ক্ষত রয়েছে। গাজার বাসিন্দা ও মেডিক্যাল কর্মীরা দাবি করেন, গুলি চালানোর পাশাপাশি একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্কও উপস্থিত ছিল এবং সেখান থেকেও গোলাবর্ষণ করা হয়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানিয়েছে, রাফাহর তাদের পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতালে রোববার ১৭৯ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসে, যাদের মধ্যে অধিকাংশের শরীরে অস্ত্রঘাতের চিহ্ন ছিল। “সব রোগীই বলেছেন, তারা সহায়তা নিতে যাচ্ছিলেন,” জানায় রেড ক্রস। সংস্থাটি একে ফিল্ড হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ অস্ত্রাহত রোগী আগমনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Gaza Humanitarian Foundation (GHF) জানিয়েছে, তাদের বিতরণকেন্দ্রে কোনো গুলি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করছে। যদিও রয়টার্স স্বাধীনভাবে ভিডিওটি যাচাই করতে পারেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে—খাদ্য বিতরণকেন্দ্র বা তার আশেপাশে কোনো বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়নি।

তবে বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা GHF-এর সহায়তা বিতরণ পদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, ঐ সংগঠনটি প্রচলিত মানবিক সহায়তার নীতিমালা মানে না, ফলে এর বিতরণ পয়েন্টগুলোতে চরম বিশৃঙ্খলা ও মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “গাজায় সহায়তা গ্রহণ এখন একটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।”

গাজার স্বাস্থ্যকর্মী আবু তারেক বলেন, “এখানে একটি মানবিক বিপর্যয় চলছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি—দয়া করে আর সহায়তা বিতরণকেন্দ্রে যাবেন না।”

রাফাহর পাশে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের একজনের বোন রেদা আবু জাজার বলেন, “আমার ভাই খাদ্য নিতে গিয়েছিল, ওকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই গণহত্যা থামাতে হবে।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, ইসরায়েল ‘সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে—মানুষকে ক্ষুধার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, তারা GHF-এর সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমকে অনুমোদন দিয়েছে এবং অন্যান্য সাহায্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও অনুমতি দিচ্ছে। তবে তাদের অভিযোগ, হামাস এই সহায়তা লুট করে নিজের দখল শক্তিশালী করছে—যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং কিছু সন্দেহভাজন লুটেরার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলেও জানিয়েছে।

এদিকে রোববার মধ্য গাজার একটি ভিন্ন GHF বিতরণকেন্দ্রেও গোলাবর্ষণের ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থবির

হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে দোষারোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য। হামাস বলছে, তারা কিছু সংশোধন চায়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ তা ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবুও মিশর ও কাতার বলছে, তারা আলোচনা এগিয়ে নিতে কাজ করছে এবং হামাসও জানিয়েছে, তারা পরোক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
পটভূমি

ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে, যেখানে ১২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। সেই প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া অভিযান চলাকালে এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং গাজার বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। অধিকাংশ বাসিন্দা এখন উদ্বাস্তু অবস্থায় শিবিরে বসবাস করছে।