শান্তি আলোচনার আগে রাশিয়া-ইউক্রেনের পাল্টাপাল্টি হামলা

SHARE

ইউক্রেন ও রাশিয়া ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফায় সরাসরি শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল সোমবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছয়, যদিও সম্প্রতি কিয়েভ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে তারা এই আলোচনায় অংশ নাও নিতে পারে। রাশিয়ার আলোচক দলও এদিন তুরস্কে পৌঁছেছে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনায় কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, শুধু একটি বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল।
কিয়েভ অভিযোগ করেছিল, রাশিয়া তখনো অগ্রহণযোগ্য ও অবাস্তব দাবিতে অনড় রয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে কিয়েভ ও মস্কো—উভয় পক্ষই শান্তি আলোচনার জন্য নিজ নিজ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রুশ পক্ষ কিয়েভে প্রস্তাবনা আগেই পাঠাতে অস্বীকৃতি জানালেও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেডিনস্কি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনের প্রস্তাবনা হাতে পেয়েছেন। অন্যদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেন তাদের প্রস্তাবনায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একটি রূপরেখা দিয়েছে, যেখানে তাদের সামরিক শক্তি সীমিত না রাখার শর্ত রয়েছে এবং রাশিয়ার দখলকৃত কোনো ভূখণ্ডের ওপর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যা মস্কো দাবি করে আসছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেছেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ঘিরে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যান ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপ ও নর্ডিক সদস্য দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে। এই দেশগুলো রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিয়েভের অন্যতম বড় সমর্থক।

গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, যদি ইউক্রেন ন্যাটো সম্মেলনে উপস্থিত না থাকে, তবে এটি পুতিনের জয় হবে—ইউক্রেনের ওপর নয়, বরং ন্যাটোর ওপর। তিনি যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি হলে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দাবি করে আসছেন, যা মস্কো ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রথমত, পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি। দ্বিতীয়ত, বন্দিদের মুক্তি। তৃতীয়ত, অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনা।
’ তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের আহ্বানও জানিয়েছেন। তবে ক্রেমলিন বলেছে, এই ধরনের বৈঠক কেবল প্রতিনিধিদের মধ্যে চুক্তির পরই সম্ভব।

রাশিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি সীমিত রাখা, ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া ও ভূখণ্ডীয় ছাড় দেওয়ার বিষয়টি।

ব্যাপক হামলা অব্যাহত
এদিলে ইস্তাম্বুলে আলোচকরা পৌঁছনোর মধ্যেই দুই দেশই রাতভর ব্যাপক হামলার খবর দিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১৬২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ৫৭টি কুরস্ক অঞ্চলে এবং ৩১টি বেলগোরোদ অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়।

এর আগের দিন ইউক্রেন রাশিয়ার মাটিতে অন্যতম বড় হামলা চালায়, যেখানে সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন ঘাঁটিতে বহু কৌশলগত বোমারু বিমান লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়। ইউক্রেন জানায়, রাশিয়া রাতভর ৮০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ১২টি বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানে।

খেরসনের গভর্নর ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিন টেলিগ্রামে লিখেছেন, করাবেলনি জেলায় গোলাবর্ষণে ৪০ বছর বয়সী এক পুরুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ বছর বয়সী আহত এক শিশু চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।