যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা: নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নিশ্চয়তা দাবি ইরানের

SHARE

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের স্পষ্ট নিশ্চয়তা চেয়েছে ইরান। দেশটির দাবি, নতুন কোনো চুক্তিতে যেতে হলে ওয়াশিংটনকে জানাতে হবে—নিষেধাজ্ঞা কখন, কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তুলে নেওয়া হবে।

সোমবার (২ জুন) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই দেশটির সরকারি বার্তাসংস্থা আইআরএনএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,

“আমরা চাই, নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত অবসান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিক। তবে তারা এখনও সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা দেয়নি।”

আল জাজিরার বরাতে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে—তারা ইরানকে একটি ‘গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব’ দিয়েছে। তবে ইরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এবং রয়টার্স জানায়, প্রস্তাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি থাকলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি।

ইরান সেই প্রস্তাবকে “শুরু করার মতোও নয়” বলে মন্তব্য করেছে।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-র একটি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় ৩–৫ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম। এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের বর্তমান মজুদ থেকে আরও কিছু পরিশোধন করলে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো উপাদান পাওয়া যেতে পারে।

তবে ইরান বরাবরই দাবি করেছে, তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত, এবং ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে নাকচ করেছে।

২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র ইরান পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকেই সম্পর্ক অবনতির দিকে যায় এবং ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমে গতি বাড়ায়।

২০২৪ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘাই বলেন,

“কোনো নথি গ্রহণ মানেই সেটি মেনে নেওয়া নয়—এমনকি গ্রহণযোগ্য বলারও উপায় নেই।”

বিশ্লেষকদের মতে, যতক্ষণ না নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বাস্তব গ্যারান্টি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ততক্ষণ ইরান চুক্তিতে আগ্রহী হবে না। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ না করা পর্যন্ত শিথিলতার পথে হাঁটবে না। ফলে আলোচনার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।