মণিপুরে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত করল ভারতীয় সেনা।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, মঙ্গলবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে ঢুকে গোপন অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৫ জন জঙ্গিকে খতম করেছে ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা। তাদের এই অভিযানে সর্বস্তরে সহায়তা করেছে সেদেশের সামরিক বাহিনী। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, সেনা অভিযান চলছে।
সেনা সূত্রে খবর, এদিনের অভিযানে সেনাবাহিনীর এলিট প্যারা কম্যান্ডোদের নামানো হয়। অত্যন্ত গোপনে তারা মিয়ানমারে ঢুকে জঙ্গিদের ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। স্পেশাল ফোর্সের সামনে কার্যত কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি জঙ্গিরা। এই গোটা অপারেশনে ভারতীয় জওয়ানদের সমন্বয় দিয়ে গিয়েছে মায়ামনমার প্রশাসন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই প্রধান জঙ্গিগোষ্ঠী এনএসসিএন (কে) এবং কেওয়াইকেএল জঙ্গিরাই সেখানে ছিল।
এদিন অভিযানের সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (এডিজিএমও) মেজর জেনারেল রণবীর সিংহ জানান, গত কয়েকদিন ধরেই তাদের হাতে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা-তথ্য আসছিল যে, আগামী দিনে মণিপুরের মতো হামলা আরও কয়েকটি জায়গায় করার ছক কষছিল জঙ্গিরা। তিনি জানান, গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলাগুলি করার পরিকল্পনা করছিল মণিপুরের হামলায় জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীরা। ফলে, আশঙ্কাকে নিষ্ক্রিয় করতে আগাম পাল্টা-হামলা চালানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মণিপুরে সেনা কনভয়ে জঙ্গিরা হামলা চালালে ১৮ জওয়ান নিহত হন। ওইদিন সকালে চন্দেল জেলার মল্টুকে টহল দিচ্ছিলেন ৬ নম্বর ডোগরা রেজিমেন্টের জওয়ানরা। অতর্কিতে রাস্তার ধারের জঙ্গল থেকে জওয়ানদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু করে জঙ্গিরা। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন জওয়ানরা। ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সেনা হেডকোয়ার্টারে খবর পৌঁছতে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় বিশাল বাহিনী। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য উড়িয়ে নিয়ে যেতে পাঠানো হয় হেলিকপ্টারও। হামলার দায় স্বীকার করে আলফা, কেওয়াইকেএল, এনএসসিএন (কে) সহ চারটি জঙ্গি সংগঠন।
হামলার ঘটনায় তদন্তে নেমে চাণ্ডেল সংলগ্ন পারালং, চারং, মলতু-সহ বেশ কিছু এলাকায় দিনভর তল্লাশি চালায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ। জঙ্গিদের খোঁজে জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি করতে গিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয় যে, হামলাকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে থাকতে পারে। কারণ, ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্ত। সেখানেই এই জঙ্গিদের ঘাঁটি। হামলা চালিয়ে তারা সেখানেই পালিয়ে যায় বলে মত প্রকাশ করেন সেনা-কর্তারা।
সেনা সূত্রের খবর, এরপরই মিয়ানমার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেন্দ্র। একইসঙ্গে, জঙ্গিদের গতিবিধির ওপর ক্রমাগত নজর রাখতে শুরু করে দুদেশ। এর মধ্যেই নির্দিষ্ট তথ্য আসতেই একেবারে স্পেশাল ফোর্সকে দিয়ে পুরদস্তু়র গোপন অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেনা সূত্রের মতে, এদিনের অভিযানে যে জঙ্গিদের খতম করেছে জওয়ানরা, তারা সম্ভবত মণিপুরের হামলায় জড়িত ছিল।