মানবপাচার রোধে সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে

SHARE

sultana kamalমানবপাচারের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় সামলাতে সরকারকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

অভিবাসনের নামে মানবপাচার, জিম্মি করা, নির্যাতন, হত্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ের চরম মানবিক বিপর্যয ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে ‘সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ, করণীয় নির্ধারণ ও সুপারিশ প্রণয়ন’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যুগ্ম-সচিব জাফরুল হাসানের পরিচালনায় সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের  যুগ্ম-সমন্বয়কারী নাইমুল আহসান জুয়েল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাংবাদিক পরিমল পালমা প্রমুখ।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এই মানবপাচার রোধ, শ্রমিক নিরাপত্তা, নারী নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক মানবিক অধিকার নিশ্চিতে সরকারকে চাপ দিতে হবে। এজন্য আন্দোলনরত শ্রমিক ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে চাপ দিলে নাগরিকদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকার বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, এখন যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, গণকবরে মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে, সাগরে মানুষ ভাসছে, এসব হচ্ছে কর্মসংস্থান নেই বলে, দেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই বলে। যখন রানা প্লাজার মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটে, সাগরে এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তখনই আমরা কেবল নড়েচড়ে বসি, অন্যথ‍ায় এসব বিষয়ের খবর কেউ রাখে না। এ ধরনের সংকট স্থায়ীভাবে নিরসনে আমাদের জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক বলেন, সাগরে যে কী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আমরা তা ভাবতেও পারি না। যেসব মানুষ বাঁচার জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য সাগর পাড়ি দিয়ে অন্যত্র যেতে চেয়েছে তারা এখন জঙ্গলে লাশ হচ্ছে, একজনের খাবার আরেকজন কেড়ে নিচ্ছে। খাবার নেই, পানি নেই, খুবই মর্মান্তিক অবস্থা। মানবপাচার ও এসব কারণে সৃষ্ট এ ধরনের বিপর্যয় সামলাতে সরকারকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।

তিনি বলেন, এসব বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়ছে বলে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না বলে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের এক হতে হবে।

সভায় অন্য বক্তারা মানবপাচারের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা দাবি জানান, যে বাংলাদেশিরা বিদেশের মাটিতে পড়ে আছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক সক্রিয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, এস বিষয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের জন্য অধিকতর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। একইসঙ্গে মানবপাচারে জড়িত গডফাদারদের দ্রুত আইনের  আওতায় আনতে হবে।

তারা বলেন, মানবপাচারের ঘটনায় সম্প্রতি থাইল্যান্ডে এক সেনা কর্মকর্তা ও বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা ধরা পড়েছেন। অনুসন্ধান করলে আমাদের রাঘব-বোয়ালদের মুখোশও উন্মোচিত হবে। এদের অনেককে আবার কক্সবাজারে তোরণ দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

বক্তারা দালাল চক্র নির্মূল, বিদেশে গমন বন্ধে গণসচেতনতা বাড়ানো ও বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণসহ ‘মানবপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিধিমালা প্রণয়ন ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান।