সময়টা যদিও সন্ধ্যা, শহরের এক রেস্তোরাঁয় ব্যস্ততা তখনই দেখার মতো৷ শুরু হয়েছে ওয়েটারদের ছোটাছুটি৷ কোনো কোনো টেবিলে বাচ্চারা ছবি আঁকছে৷ ঠিক সেই সময় সেখানে কিছুটা সন্ত্রস্তভাবেই ঢুকলেন এক আর্থিক পরিষেবা সংস্থার কর্মকর্তা রাফিদা বন্যা আহমেদ৷
মধ্যবয়সিনীর বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলটা নেই৷ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জঙ্গিদের হাতে যখন আক্রান্ত হন তখনই খোয়া যায় সেটি৷ তার সঙ্গে মাথায় আঘাতও লাগে৷ সেই আক্রমণেই মারা যান তার স্বামী অভিজিৎ রায়, যার ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার হিসাবে খ্যাতি ছিল৷ ভেরিজন নামে এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় তিনি কর্মরত ছিলেন৷
অভিজিতের মৃত্যুর পর, আমেরিকায় ফিরে তার প্রথম সাক্ষাৎকারে রাফিদা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন৷ তার কথায়, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন৷ অথচ, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রতিনিধি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি৷ তাদের কাছে আমার কোনো অস্তিত্বই নেই৷ ওনারা বোধ হয় জঙ্গিদের খুব ভয় পান৷ বাংলাদেশ কী তা হলে এবার পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের পথ ধরবে?’
এই অভিযোগ খণ্ডন করে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমার মা, ব্যক্তিগত স্তরে অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়কে সমবেদনা জানিয়েছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একজন ঘোষিত নাস্তিকের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়৷ ভুলবেন না, মৃত্যুর আগে অভিজিতবাবুর যে বইটি প্রকাশিত হয় তার নাম ছিল ‘ধর্মের জীবাণু৷’
সজীব ওয়াজেদ, যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ-এর অন্যতম উপদেষ্টাও, বলেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, নাস্তিকতায় নয়৷ যেখানে প্রধান বিরোধী দল আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ধার্মিক তাস খেলে যাচ্ছে, সেখানে কোনো নাস্তিক ব্লগারকে আমাদের পক্ষে সরাসরি সমর্থন করা সম্ভব নয়৷’
২০০০ সালে অভিজিত্ মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থনে ব্লগ লেখা শুরু করলে পাশে বেশি কাউকে পাননি৷ ২০০২ সালে তিনি যখন সিঙ্গাপুরে, তখন এক আমেরিকা নিবাসীর একটি ব্লগ পোস্ট পড়েন যার বিষয় ছিল, ‘বুঝি না মানুষ কেন এখনও রূপকথায় বিশ্বাস করে৷’ লেখিকার নাম ছিল রাফিদা বন্যা আহমেদ৷
রাফিদার কথায়, ‘আমি তখন আটলান্টায় চাকরি করি৷ কন্যা তৃষাকে নিয়ে আমার সংসার৷ সেই ব্লগ পড়ে অনেকে আমায় অনলাইনে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন৷ পরের দিন দেখি অভিজিৎ রায় নামে একজন আমাকে জোরালো ভাবে সমর্থন করছেন৷
এই ভাবেই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়৷ রাফিদা তার মেয়ে স্কুলের গণ্ডি পেরোবার আগে আমেরিকা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় অভিজিতই ২০০৬ সালে আমেরিকায় চলে আসেন৷ এর কিছু দিন পরে তাদের বিবাহ হয়৷ দু’জনেই বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিকত্ব নেন৷ তৃষা কলেজে যেতে শুরু করলে অভিজিৎ ও রফিদা ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের সিদ্ধান্ত নেন৷