নজরুল মঞ্চের গ্রিনরুমেই প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি-আপনি আমার সঙ্গে ঢাকায় চলুন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রস্তাবে রাজিও হয়েছেন৷ খুব সম্ভবত আগামী ৬ ও ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা যাচ্ছেন৷ মমতাও জানিয়ে দিয়েছেন, জুনের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা যেতে তার কোনো অসুবিধা নেই৷ মাসখানেক পরে হলে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারতেন না৷ কারণ জুলাইয়ে তার লন্ডন সফরে যাওয়ার কথা৷ প্রধানমন্ত্রী মমতাকে জানিয়েছেন, তিনি জুনেই যাবেন৷
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বকেয়া অর্থ পেতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলও আগের সর্বাত্মক মোদি-বিরোধিতা থেকে বেশ কিছুটা সরে এসেছে৷ আপাতত ঝুড়ি, ঘটি, কালো ছাতা, লাল ডায়েরি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর্ব অতীত৷ এখন বরং জমি বিল বাদে অন্য প্রায় সব বিলেই কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল৷ এই আবহে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ ঠেলতে পারেননি মমতা৷
চার বছর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি করেছিলেন মনমোহন সিং৷ তিনিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকা যেতে অনুরোধ করেছিলেন৷ কিন্ত্ত একেবারে শেষসময়ে মমতা যাননি৷ গিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ৷ এ বার সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুমোদনের পর নরেন্দ্র মোদি যখন ঢাকা যাচ্ছেন, তখন সঙ্গে যাচ্ছেন মমতা৷ তবে গগৈ এবারও যাবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ কারণ, গগৈকে এখনও আমন্ত্রণ জানাননি মোদি৷ প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ঢাকা সফর নিয়ে আলোচনাটা হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক কলকাতার সফরের সময় নজরুল মঞ্চে৷
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামান্য পরে নজরুল মঞ্চে পৌঁছে সেখানকার নবনির্মিত বাতানুকূল গ্রিন রুমে মোদির কাছে চলে যান৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নিভৃতে কিছুক্ষণ আলোচনা হয়৷ তখনই প্রধানমন্ত্রী তাকে ঢাকা সফরের প্রস্তাব দেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তার এমনিতে কোনও আপত্তি নেই৷ কিন্ত্ত জুলাই হলে তিনি যেতে পারবেন না৷ দিনক্ষণ ঠিক করার আগে তার সঙ্গে যেন একবার কথা বলে নেওয়া হয়৷ প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন, তিনি অত দেরি করবেন না, জুনের প্রথম সপ্তাহেই যাবেন৷ তখন মমতা জানান, তা হলে তার ঢাকা যেতে আপত্তি নেই৷
এবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি পদে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি যে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা বলেন, সেটা শুধু কথার কথা নয়৷ তিনি পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য করতেও সমান আগ্রহী৷ বস্ত্তত উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে পাশে পেতে তিনি উদগ্রীব৷ কারণ রাজ্যসভায় বিল পাস করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের সমর্থন পেলে নিঃসন্দেহে কিছুটা সুবিধা হবে মোদির৷ আপাতত, এনডিএ বাদে এআইএডিএমকে ও বিজু জনতা দলের সমর্থন পেয়েও রাজ্যসভায় তার লাভ হচ্ছে না৷ তৃণমূলকে পাশে পেলে সংখ্যার দিক থেকে রাজ্যসভায় বিল পাস করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন তিনি৷
তা ছাড়া ভারতের যে দু’টি রাজ্যে সব থেকে বেশি বাংলাদেশি ছিটমহল আছে, তার একটা পশ্চিমবঙ্গ, অন্যটা অসম৷ এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যেহেতু বাংলাদেশের নিবিড় যোগ রয়েছে, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও বেশি করে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছেন মোদি৷ তাতে দেশে তো বটেই, বাংলাদেশের কাছেও একটা ভালো বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে৷
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর, মোদির সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের সম্মতিপত্রে সই করবেন৷ এ ছাড়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় তিস্তা প্রসঙ্গ উঠবে৷ ২০১১ সালে মনমোহনের সঙ্গে বাংলাদেশে মমতার না-যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তিস্তা চুক্তি৷ এখন অবশ্য তিস্তা চুক্তি নিয়েও আগের সেই কট্টর অবস্থান মমতার নেই৷ রাজ্যের স্বার্থ বজায় রেখে চুক্তি হলে মমতার আপত্তি হবে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে৷ তবে গরমের সময় যখন তিস্তায় পানির পরিমাণ কমে যায়, তখন কতটা পানি দেওয়া হবে, তা নিয়ে নয়া দিল্লি ও ঢাকা এখনও মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি৷ এ ব্যাপারে মতৈক্য হলে তিস্তা চুক্তিও হয়ে যাবে৷ সেদিক থেকেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ৷