গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিষেধাজ্ঞার পথে ভাবতে বলেছে স্পেন। মাদ্রিদে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর প্রতিনিধি সভার আগে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস এই মন্তব্য করেন। হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের পর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের মিত্ররাও এখন আন্তর্জাতিক চাপের সঙ্গে একমত হচ্ছেন।
প্রায় তিন মাসের মানবিক সহায়তা অবরোধে গাজার খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার ফলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বাড়ছে।
যদিও সম্প্রতি ইসরায়েল কিছু সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
আলবারেস বলেন, ‘গাজায় অমানবিক ও অর্থহীন যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘মানবিক সহায়তা যেন বিপুল পরিমাণে, কোনো শর্ত ছাড়াই গাজায় প্রবেশ করতে পারে এবং তা যেন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে না থাকে। গাজা এখন মানবতার উন্মুক্ত ক্ষত।
’
বৈঠকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক, মরক্কো, আরব লিগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতিনিধিরা অংশ নেন। স্পেন, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া— যারা ইতিমধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে— তারাও উপস্থিত ছিল। সঙ্গে ছিল ব্রাজিলও।
ইইউ-ইসরায়েল সহযোগিতা চুক্তি স্থগিতের আহ্বান
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দেওয়ার পর স্পেন তা ‘তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত’ করার আহ্বান জানায়।
আলবারেস আরো বলেন, স্পেন চায় ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং এমন ব্যক্তিদের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা দিতে, যারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে চিরতরে ধ্বংস করতে চায়’।
ইসরায়েলের গাজা ও পশ্চিম তীরে নীতির দীর্ঘদিনের সমালোচক স্পেন। গত মে মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরো বেড়েছে। গত সপ্তাহে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যা দেন। এর জবাবে ইসরায়েল স্পেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া বার্তা দেয়।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা
রবিবারের বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধানে দ্বি-রাষ্ট্র নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব এমন এক শান্তি চাই, যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল পাশাপাশি টিকে থাকতে পারবে এবং পুরো অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ফিরবে।’
আলবারেস জানান, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো ইইউ শক্তিগুলোর অংশগ্রহণ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথে অগ্রগতির বার্তা দেয়।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো আগামী সপ্তাহে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে ফিলিস্তিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারসেন শাহিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি রবিবার একাধিক আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন।
এই কূটনৈতিক উদ্যোগ আগামী মাসে নিউইয়র্কে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সম্মেলনের আগাম প্রস্তুতি। সানচেজ ঘোষণা করেছেন, তার দেশ জাতিসংঘে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রস্তাবনা সমর্থন করবে।
সূত্র: টাইম অব ইসরায়েল, এএফপি