পা মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু সেই পা-ই হয়ে গেল ঢাকার টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের আক্ষেপ আর দুর্ভাগ্যের কারণ। সকালে কুলক্ষণটা এসেছিল আনফিট পেসার শাহাদাত হোসেনের মাধ্যমে। দুই বল করে লুটিয়ে পড়া শাহাদাত শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের পর ছিটকে গেলেন ম্যাচ থেকেই।
পায়ের আরো দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছোবল ছিল বাংলাদেশের অর্জনে। প্রথম দিনে পাকিস্তানের দুই সেঞ্চুরিয়ানের ইনিংসে ছিল বাংলাদেশের দুই বোলারের পায়ের আশীর্বাদ। ১৯ রানে ক্যাচ দিয়েও আজহার বেঁচে যান মোহাম্মদ শহীদের নো বলে। দিন শেষে তিনি অপরাজিত আছেন ১২৭ রানে। ইউনুসও সেই পথেরই পথিক। ৭৮ রানে সাকিবের হাতে ধরা পড়েও লাইফ লাইন পান তিনি সৌম্য নো বল করায়। অম্ল-মধুর এসব ঘটনার বাইরে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা রান তুলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। আজহার-ইউনুসের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩.৫৮ রানরেটে প্রথম দিন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩২৩ রান। আজহারের সঙ্গী মিসবাহ ৯ রানে ব্যাট করছেন।
টেস্ট ক্রিকেটের বিচিত্র রূপ দিনভরই দেখা গেছে মিরপুরে। সকালের ময়শ্চারে জুনায়েদ, ওয়াহাব রিয়াজদের গতি, সুইংয়ের মুখে না পড়ার অভিপ্রায়েই হয়তো টস জিতে বোলিং নেন মুশফিক। খুলনায় নির্বিষ বোলিং করা শহীদ হয়ে গেলেন ঢাকা টেস্টে প্রথম দিনের সেরা বোলার। সকালে বল করলেন তিনটা স্লিপ, গালি, পয়েন্ট নিয়ে। মিরপুরের পেস বোলিং সহায়ক উইকেট হলেও বাংলাদেশের একাদশে স্পিনার ভরা। দিনভর তাই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হলো একমাত্র স্বীকৃত পেসার শহীদকে (২০ ওভার)। উইকেটের খোঁজে অধিনায়ক মুশফিক যেমন ব্যবহার করলেন নয় বোলার। তামিম, মুশফিক ছাড়া সবাই বল করেছেন।
শাহাদাত-কাহিনীর পরও শহীদের বোলিংয়ে প্রথম ঘণ্টাটা ভালোই কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন শহীদ একাই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই বাংলাদেশকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন তিনি। লেন্থ বলটাতে একটু বাড়তি বাউন্স ছিল, যা হাফিজের (৮) ব্যাটে চুমু দিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়ে। খুলনা টেস্টে শ্রীহীন বোলিং করা শহীদের ৮ ওভারের প্রথম স্পেলটা সোনায় সোহাগা হয়নি তার নিজের ভুলেই। ইনিংসের ১২তম ওভারে আজহারকেও আউট করেছিলেন তিনি। তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ নিয়েছিলেন সৌম্য। দুর্ভাগ্য শহীদের ও বাংলাদেশের, নো বলের কারণে বেঁচে যান ১৯ রানে থাকা আজহার।
লাঞ্চের আগে রানের জন্য ছটফট করতে থাকা সামি আসলাম (১৯) তাইজুলের বলে মিড উইকেটে শাহাদাতের হাতে ধরা পড়েন। ৭০ রানে পাকিস্তানের ২ উইকেট তুলে নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর শাহাদাত পাকাপাকিভাবে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। ওয়ার্মআপ করতে গিয়ে পড়ে যান এবং স্ট্রেচারে করে তার ফেরাটা ম্যাচে দশ জনের দল বানিয়ে দিল বাংলাদেশকে।
দ্বিতীয় সেশনে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যাদের আর টলাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ইউনুস-আজহার আলীর জুটি নির্বিঘ্নে এগিয়ে নিয়ে গেছে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ড। সাবলীলভাবেই সাকিব-তাইজুলদের খেলে গেছেন তারা। আজহারের চেয়ে রান তোলায় দ্রুত ছিলেন ইউনুস। ১৩২ বলে আজহার হাফ সেঞ্চুরি করেন। আর ৭২ বলেই পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছান ইউনুস। দ্বিতীয় সেশনে ১২৬ রান তোলে পাকিস্তান।
চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই ইউনুসকে ফিরিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস! এবার ৭৮ রানে থাকা ইউনুস সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন সৌম্য নো বল করায়। জীবন পাওয়ার পর স্বাচ্ছন্দ্যে ২৯তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন অভিজ্ঞ ইউনুস, যা তাকে বসিয়েছে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পাশে। অগ্রজের পর নিজের অষ্টম সেঞ্চুরিটা করেছেন আজহারও।
দিনটা তারা দুজনই শেষ করবেন এমন ইঙ্গিতই মিলছিল তাদের ব্যাটিংয়ে। সেখানে বাধ সাধলেন দিনের সেরা বোলার শহীদ। ইউনুসকে শুভাগতের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। ইউনুস ১৯৫ বলে ১৪৮ রানের (১১ চার, ৩ ছয়) অনবদ্য ইনিংস খেলেন। ২৫০ রানে থামে পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেট জুটি। এটি দুই দেশের লড়াইয়ে তৃতীয় উইকেটে সেরা জুটি। আগের সর্বোচ্চ ১৩০ রানের জুটি ছিল আশরাফুল-জাভেদ ওমরের গড়া, ২০০৩ সালে পেশোয়ারে।
তৃতীয় সেশনে এক উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান যোগ করে পাকিস্তান। শেষ বিকালে আর অঘটন ঘটতে দেননি পাক অধিনায়ক মিসবাহ ও আজহার আলী। বাংলাদেশের শহীদ ২টি, তাইজুল একটি উইকেট নেন।