ভয়াবহ সংঘাতের মধ্যেও শুক্রবার একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি দেখা গেছে ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনায়। রাশিয়া শুক্রবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে তিন বছরের বেশি সময় পর হওয়া প্রথম সরাসরি আলোচনা সফল হয়েছে। উভয় পক্ষ শিগগিরই এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি, দুই পক্ষই ভবিষ্যৎ যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের পর আলোচনা পুনরায় শুরু করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইস্তাম্বুলে ওসমানীয় যুগের এক প্রাসাদে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিলেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদল। ২০২২ সালের মার্চের পর এটাই এমন প্রথম বৈঠক। আলোচনা শুরু হলেও দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল সুস্পষ্ট।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনার পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেওয়া হয়।
এতে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা আলোচনার ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট এবং কিয়েভের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উভয় পক্ষ এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময় করবে।’
এই বিনিময় হতে যাচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর সবচেয়ে বড় ধরনের বন্দি বিনিময়ের একটি।
মেদিনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ আমাদের দুই দেশের নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে।
আমরা সেই অনুরোধ গ্রহণ করেছি।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার পুতিনকে তুরস্কে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতে চ্যালেঞ্জ জানান। যদিও আলোচনার প্রস্তাব প্রথমে পুতিনই দিয়েছিলেন, তিনি নিজে অংশ না নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একজন অভিজ্ঞ মধ্যম স্তরের প্রতিনিধি দল পাঠান। আলোচনাটি বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি দুই পক্ষকে শান্তিচুক্তির পথে এগোতে চাপ দিয়ে আসছেন, বলেছেন তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চান যাতে করে ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতটি শেষের পথে যেতে পারে।
কিয়েভ এই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া বলেছে—যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আগে তার শর্তাবলি নির্ধারণ করা দরকার।
মেদিনস্কি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই যুদ্ধবিরতি কেমন হবে, তা লিখিতভাবে ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করবে। তিনি বলেন, ‘এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো উপস্থাপনের পর আমরা মনে করি, আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যৌক্তিক এবং এতে আমরা একমতও হয়েছি।’
রাষ্ট্রীয় টিভিতে বিবৃতির পর এক সাক্ষাৎকারে মেদিনস্কি বলেন, ইতিহাস প্রমাণ করে যে, সবসময় যুদ্ধবিরতির পরই আলোচনা হয় না। কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীনও আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘নেপোলিয়নের কথায় বলতে হয়, সাধারণত যুদ্ধ এবং আলোচনা একইসঙ্গে চলে।’
ক্রেমলিন শুক্রবার আরো জানায়, ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য ইস্যুতে অগ্রগতি অর্জনে প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে একটি বৈঠক অত্যাবশ্যক। তবে এটি আয়োজনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন এবং তা অবশ্যই ফলপ্রসূ হতে হবে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন, তবে জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এখন পর্যন্ত তারা মুখোমুখি দেখা করেননি। যদিও উভয় নেতা সরাসরি বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরহি কিসলিৎসিয়া বলেছেন, ‘এটি একটি কঠিন দিনের খুব ভালো সমাপ্তি। ১০০০ ইউক্রেনীয় পরিবারের জন্য এটি দারুণ এক খবর।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানান, বন্দি বিনিময়ের একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা হয়েছে, তবে এখনই সেই তারিখ প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তবে ইউক্রেন ও এর মিত্রদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে, রাশিয়া হয়তো এই ধরনের আলোচনার মাধ্যমে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। তাদের মতে, মস্কো আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন ১৮তম নিষেধাজ্ঞা পর্ব ঠেকাতেই এই আলোচনা কাজে লাগাতে চায়।
সূত্র : রয়টার্স