শুল্ক ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প-ভারতের পাল্টাপাল্টি দাবি

SHARE

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের ওপর থেকে ভারত শুল্ক তুলে নিতে রাজি হয়েছে—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দাবি দ্রুত নাকচ করেছে ভারত সরকার।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এখনো আলোচনা চলছে এবং সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত নয়। তিনি জানান, যেকোনো বাণিজ্য চুক্তি হবে পারস্পরিকভাবে লাভজনক এবং উভয় দেশের স্বার্থরক্ষায় কার্যকর।’

একদিন আগেই দোহায় এক ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, দিল্লি এমন একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে তারা শুল্ক আরোপ করবে না।

ট্রাম্প আরো বলেন, তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুককে জানিয়েছেন যে, ভারতে উৎপাদন নিয়ে তার আপত্তি রয়েছে, কারণ ভারত বিশ্বের ‘সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর একটি’।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, তারা শুল্ক ছাড়াই আমাদের পণ্য নিতে চায়। আমি টিম কুককে বলেছি, ভারতে তুমি যত কারখানা গড়ো না কেন, আমাদের তাতে আগ্রহ নেই। ভারত নিজেরাই সামাল দিক।
’ তবে ভারত সরকার জানিয়েছে, এমন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং এখনও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কোনো পক্ষই এখনো কিছু নির্দিষ্ট করে বলেনি।

এই পটভূমিতে ভারতের বাণিজ্য বিশ্লেষক অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘যেহেতু ট্রাম্প ভারতের উচ্চ শুল্ককে বাণিজ্য ঘাটতির জন্য দায়ী করে আসছেন, তাই ভারত হয়তো ‘জিরো ফর জিরো’ নীতি গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ গাড়ি ও কৃষি পণ্য বাদে ৯০ শতাংশ মার্কিন রপ্তানির ওপর শুল্ক শূন্য করা যেতে পারে।
তবে এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকেও সমানভাবে শুল্ক কমাতে হবে।’

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন গত এপ্রিলে ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে, যা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। এই স্থগিতাদেশ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। এর আগেই দিল্লি একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে চায়। অন্যদিকে, এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দ্বিপাক্ষিক শুল্ক কমাতে একমত হয়েছে।
চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর চীনের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ডলার। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এখনো প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ভারত ইতিমধ্যে বারবন হুইস্কি, মোটরসাইকেলের মতো কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তবে কৃষিখাতে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ এটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।

বহু বছর দ্বিধার পর ভারত এখন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। সম্প্রতি ভারত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যেখানে হুইস্কি ও গাড়ির মতো পণ্যের ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হবে। এর আগে ভারত ইউরোপের চারটি দেশের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে এ বছর মধ্যেই ভারত জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি