ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪০ বেসামরিক ও ১১ সেনা : পাকিস্তান সেনাবাহিনী

SHARE

ভারতের সঙ্গে গত সপ্তাহের সংঘর্ষে দেশটির অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১১ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই তথ্য জানিয়েছে। নিহত বেসামরিকদের মধ্যে সাতজন নারী ও ১৫ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া, সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো ১২১ জন।
এ ঘটনাকে সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক উত্তেজনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষে পাকিস্তানের ১১ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে যেকোনো হামলার জবাব দেওয়া হবে ‘দ্রুত, ব্যাপক এবং চূড়ান্তভাবে’।

গত সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তান টানা চার দিন ধরে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল, যা ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক উত্তেজনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উভয় পক্ষই যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং গোলাবর্ষণ চালায়। এপ্রিলের ২২ তারিখ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি হামলাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বুধবার ভারতের পক্ষ থেকে একাধিক পাকিস্তানি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, যেগুলোকে তারা ‘সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি’ বলে দাবি করে। জবাবে পাকিস্তান জানায়, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন পাকিস্তান জানায়, ভারত তাদের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এরপর পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যার মধ্যে উত্তর ভারতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র মজুদকেন্দ্রও ছিল।

এই উত্তেজনার মধ্যেই কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন, যা তাৎক্ষণিক যুদ্ধের শঙ্কা কিছুটা প্রশমিত করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বর্বরোচিত হামলাগুলোতে শহীদ হয়েছেন ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক — যাদের মধ্যে রয়েছেন সাত নারী ও ১৫ শিশু। আহত হয়েছেন আরো ১২১ জন, যার মধ্যে ১০ জন নারী ও ২৭ জন শিশু রয়েছেন। মাতৃভূমি রক্ষায় অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ১১ জন সদস্য এবং আহত হয়েছেন আরো ৭৮ জন।’

নিহত সেনা সদস্যদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন নন-কমিশনড অফিসার এবং পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এক স্কোয়াড্রন লিডার ও চারজন টেকনিশিয়ানও রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় — পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বা ভূখণ্ডে হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার জবাব দেওয়া হবে দ্রুত, সর্বব্যাপী এবং চূড়ান্তভাবে ইনশাআল্লাহ।’

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর উভয় দেশ নিজেদের বিজয় দাবি করেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, শনিবার চালানো প্রতিশোধমূলক অভিযানে তারা ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং একটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম-মারসুস’, যার অর্থ আরবি ভাষায় ‘সিসার প্রাচীর’।

এদিকে ভারতও নতুন স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটির রানওয়ে ও রাডার স্টেশনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় বিমান হামলায়। উল্লেখ্য, উপমহাদেশের এই দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী দেশ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর কাশ্মীর ইস্যুতে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি লড়েছে। উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ায় এ ধরনের সামরিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

সূত্র : এএফপি, আল-আরাবিয়া