পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সদ্য ঘটে যাওয়া সীমিত সময়ের সংঘর্ষে দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করছে, কিন্তু বাস্তবে এই সংঘাতে জয়ী কেউই নয়।
সিএনএনের একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ‘পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে’ এমন শিরোনাম ভেসে ওঠে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেন, কাশ্মীরে পর্যটক হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ভারতের সামরিক অভিযান সন্ত্রাসীদের জন্য এক শক্ত বার্তা ছিল।
অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজধানীতে মানুষ রাস্তায় নেমে উদযাপন করে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেন, ‘আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী এক ঐতিহাসিক কীর্তি গড়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের জেট ভারতীয় বন্দুকের আওয়াজ থামিয়ে দেয়।’
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা আকাশযুদ্ধে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান – যার মধ্যে তিনটি উন্নত রাফায়েল জেট – ভূপাতিত করেছে। ফরাসি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান অন্তত একটি ভারতীয় রাফায়েল জেট গুলি করে নামিয়েছে।
তবে ভারত সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিমানের ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি।
অন্যদিকে ভারত উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও রাডার স্টেশনে ভারতের ব্যাপক বিমান হামলায় বড় ক্ষতির প্রমাণ দেখানো হয়েছে।
বস্তুত, উভয় দেশের রাজনীতিবিদ ও সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধামতো তথ্য উপস্থাপন করলেও এই সংঘর্ষে প্রকৃত বিজয়ী কেউই নয়।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে হঠাৎ; যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ স্যোশাল প্ল্যাটফর্মে সেটি প্রকাশ করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং উত্তেজনা কমাতে আহ্বান জানান।
পাকিস্তান এই মধ্যস্থতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, কিন্তু ভারত এটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান হলো—বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এবং কোনো বিদেশি মধ্যস্থতা তারা মেনে নেয় না।
এমনকি যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যেটিকে পাকিস্তান স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু ভারত উপেক্ষা করেছে।
সব মিলিয়ে, এই যুদ্ধবিরতি মূলত তাৎক্ষণিক উত্তেজনা প্রশমনের একটি পদক্ষেপ মাত্র—গভীর সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে, এবং কাশ্মীর নিয়ে পুরনো সংঘাত যে আবারও জ্বলে উঠবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।