মাথার ওপর থেকে ছাদ হারানোর অনিশ্চয়তা ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তাদের। ক’দিন ধরে দু-চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না। কী করবেন, কোথায় যাবেন বউ-বাচ্চা পরিবার নিয়ে? ছিন্নমূল হওয়ার এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কে যেন বলে যায়, একমাত্র ধর্মান্তকরণই পারে তোমাদের বাঁচাতে। সত্য-মিথ্যে যাচাইয়ের মতো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না তারা, বাল্মীকিরা। কালক্ষেপ না-করে, রাতারাতি তারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম। দু-একজন নয়, একটা গোটা অঞ্চলের কয়েক’শো পরিবার, সবমিলেয়ে ৮০০-র বেশি বাল্মীকি। মঙ্গলবার, আম্বেদকরের ১২৪তম জন্মদিনটিকেই ধর্মান্তকরণের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তারা। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের রামপুরে।
কেন ঘর হারানোর দুশ্চিন্তা? নিছকই কি গুজবের ভূত ভর করেছিল ওদের ওপর? বাল্মীকিরা বলছেন, ‘না’। দিন কয়েক আগেই পুর কর্তৃপক্ষ এসে তাদের সবার বাড়িতে লাল দাগ কেটে যায়। জানতে পারেন, ভেঙে দেওয়া হবে তাদের মাথার ছাদ। সেখানে তৈরি হবে শপিং মল। তারা এ-ও জানতে পারেন উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী আজম খানের সম্মতিতেই গোটা ব্যাপারটি ঘটতে চলেছে। তাই দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবারগুলো।
মঙ্গলবার দিনভর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকপ্রস্থ নাটক হয়। জানা যায়, ধর্মান্তকরণের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। ছিলেন না ধর্মীয় কোনো গুরুও। মাথায় মুসলিম টুপি পরে, বাল্মীকিরা নিজেদের মুসলিম বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার জেরে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রামপুরের বাল্মীকি বস্তিতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বাল্মীকি বস্তির এক বাসিন্দা ভীম অনার্যর কথায়, ‘ক’দিন আগে আমাদের এলাকায় পুরসভার এক কর্মী এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে যান, যত দ্রুত সম্ভব ঘর খালি করে চলে যেতে হবে।’ অভিযোগ, তারা ওই পুরকর্মীর কাছে অসহায়তা প্রকাশ করলে, তিনিই বাল্মীকিদের পরামর্শ দেন মুসলিমে ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার। ঘর আগলাতে সেই প্রস্তাবে তত্ক্ষণাত সম্মতি দেন তারা।
ওই বস্তিরই আর এক বাসিন্দা অবিনাশ তপন জানালেন, কিছুদিন আগেই তাদের বাল্মীকি বস্তিতে এসেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। বাসিন্দারা তার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করলে, তিনি আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু, বাল্মীকিরা চেয়েছিলেন প্রশাসনের তরফে লিখিত আশ্বাস। সেই আশ্বাস না-মেলাতেই ধর্মান্তরিত হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে ফেলেন।