বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রুলের আদেশের দিন পিছিয়ে আগামী ২০ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার আদেশের দিন ধার্য ছিল। তবে আরও তথ্য-উপস্থাপন করবেন জানিয়ে সময়ের আবেদন জানান আবেদনকারী বাদীপক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদেশের দিন পিছিয়ে আগামী ২০ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত ৮ ও ৯ এপ্রিল দু’দিনের শুনানি শেষে বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
শুনানিতে আবেদনকারী বাদীপক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নিখোঁজের আগে সালাহউদ্দিন আহমেদের দু’জন কর্মচারীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ৠাব। তাদের কাছ থেকেই ঠিকানা নিয়ে সালাহউদ্দিনকেও ৠাবই তুলে নিয়েছে।
সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনেরও আরজি জানান খন্দকার মাহবুব। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে নিয়ে গেছে।
যদি নাও নিয়ে থাকে, তাহলে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তাদেরই। খুঁজে পেতে ব্যর্থতা ও কারা কারা ব্যর্থ, সেগুলো চিহ্নিত করতেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের আরজি জানান তিনি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, রুলের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এ রুল আর চলতে পারে না।
তিনি বলেন, আদালত যে সময়সীমা নির্ধারণ করে রুল জারি করেছিলেন, তা শেষ হয়ে গেছে। আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রুলের জবাব দিয়ে দিয়েছি। ফলে রুল আর কার্যকর নেই, এ রুল চলতে পারে না।
এর আগে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ আরও দু’দিন এ রুলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনকারী বাদীপক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৬ মার্চ চারটি পয়েন্টে শুনানি করতে চাইলেও সময় শেষ হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে ৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে দেন।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১৫ মার্চ হাইকোর্টের রুলের জবাবে পাঁচটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি করেন। প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করে তিনি জানিয়েছিলেন, সালাহউদ্দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর হেফাজতে নেই এবং কোনো বাহিনী তার খোঁজ পায়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিলকারী পাঁচটি বাহিনী হচ্ছে পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), এসবি, র্যাব ও সিআইডি। এগুলোর মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদের খোঁজ পেতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়। অন্য চার বাহিনী জানায়, তাদের হেফাজতে সালাহউদ্দিনকে গ্রহণ করা হয়নি।
গত ১২ মার্চ সালাহউদ্দিনকে ১৫ মার্চের মধ্যে কেন খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট বেঞ্চটি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা ফৌজদারি আবেদনের শুনানি শেষে এ রুল জারি করা হয়।
ওইদিন সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাসিনা আহমেদের পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি ছাড়াও আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও এজে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি’র কমিশনারকে।
এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন। গত ১১ মার্চ থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, আগেরদিন ১০ মার্চ রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তবে পুলিশ, র্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি। কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি।
সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি। এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
১১ মার্চ রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের ‘নিখোঁজ’ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে। তবে দুই থানাই জিডি গ্রহণ করেনি।
হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে ‘খুঁজে’ বের করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দু’দফা স্মারকলিপি দিয়েছেন এবং তার অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে ধরে নিয়ে গেছেন, এটা তিনি নিশ্চিত।
একই অভিযোগ তুলে সালাহউদ্দিনের ‘মুক্তি’ এবং দ্রুত তাকে আদালতে হাজির করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে।