রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ের মিসরীয় পাশে বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় ডজনখানেক বুলডোজার, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ও ভ্রাম্যমাণ ঘর বহনকারী ট্রাক সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মিসরের সরকার সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
মিসরের গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ আল-কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই সরঞ্জাম সীমান্তে অবস্থান করছে। এএফপির একজন আলোকচিত্রীও নিশ্চিত করেছেন, ট্রাকসহ এসব যানবাহন সীমান্তে অপেক্ষমাণ রয়েছে, যার মধ্যে ক্যারাভ্যানবাহী ট্রাকও রয়েছে।
এ ছাড়া সীমান্তে থাকা এক সরকারি সূত্র মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মিনাকে জানিয়েছে, এই সরঞ্জামগুলো ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে’ গাজায় প্রবেশ করতে পারে, যেখানে ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলি বিমান হামলার ধ্বংসাবশেষ সরানো ও সড়ক মেরামতের কাজে এগুলো ব্যবহৃত হবে।
তবে ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মিসরের রাফা ক্রসিং দিয়ে গাজার ভেতরে ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ওমর দোস্ত্রি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘গাজায় কোনো ক্যারাভ্যান (ভ্রাম্যমাণ ঘর) বা ভারী সরঞ্জাম প্রবেশ করছে না, এবং এ বিষয়ে কোনো সমন্বয়ও হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী, রাফা ক্রসিং দিয়ে গাজায় কোনো পণ্য প্রবেশের অনুমতি নেই।
’
এদিকে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় রাফা ক্রসিং শুধু আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য খোলা হয়েছে। অন্যদিকে কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে।
সীমান্তে অপেক্ষমাণ চালক আহমেদ আবদেল দায়েম এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশে আছি এবং আশা করি, সামনে আরো ভালো দিন আসবে।’
এ পরিস্থিতি এমন সময় সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি পরিকল্পনা নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে, যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্দানে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে।
তবে উভয় দেশই এই প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করেছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতেহ আল-সিসি এই ধরনের বাস্তুচ্যুতিকে ‘অন্যায়’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, মিসর এতে ‘অংশ নিতে পারে না।’ অন্যদিকে জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, তার দেশ গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে ‘অটল’ অবস্থানে রয়েছে।
এ মাসের শেষের দিকে মিসর আরবদেশগুলোর একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং এই সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘সমন্বিত পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করবে, যা ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূমিতে থেকেই পুনর্বাসিত হবে বলে নিশ্চিত করবে।
মিসর ও জর্দান—উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম প্রধান দাতা দেশ।