যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে একটি অফিস ব্লকের বেসমেন্টের নীচে আবিষ্কার হয়েছে রোমান ইতিহাস। এটিকে রোমান ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন শহরের প্রথম ব্যাসিলিকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খুঁজে পেয়েছেন। এটি ২ হাজার বছরের পুরনো একটি পাবলিক ভবন।
যেখানে প্রধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এখন পর্যন্ত পাথরের প্রাচীরের কিছু অংশ আবিষ্কার করেছে, যা আড়াই তলা উঁচু। খননকাজ শেষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে স্থানটি।
ব্যাসিলিকা হলো (গ্রীক ব্যাসিলিকে ) একটি বৃহৎ পাবলিক ভবন।
যার একাধিক কাজ ছিল এবং সাধারণত শহরের ফোরামের পাশে নির্মিত হত।
প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের (মোলা) সোফি জ্যাকসন বলেন, ‘এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই ভবনটি আমাদের লন্ডনের উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানাতে পারে, কেন লন্ডন শহরকে ব্রিটেনের রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক।
’
লন্ডনের ৮৫ নম্বর গ্রেসচার্চ স্ট্রিটে এই স্থানটি আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে এখানে অবস্থিত অফিস ভবনটি ভেঙে ফেলে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। পূর্ববর্তী প্রত্নতাত্ত্বিক তদন্তে বর্তমান ভবনের নিচে প্রাচীন ব্যাসিলিকার আনুমানিক অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছিল, তাই দলটি কংক্রিটের মেঝের নীচে কী লুকিয়ে আছে তা দেখার জন্য বেশ কয়েকটি ছোট পরীক্ষামূলক গর্ত তৈরি করেছিল।
তৃতীয় প্রচেষ্টায় খনন করার সময় তারা এর খোঁজ পান। সোফি জ্যাকসন বলেন, ‘আপনি রোমান কাজের একটি বিশাল অংশ দেখতে পাচ্ছেন এবং এটি অবিশ্বাস্য যে, এটি এত ভালভাবে টিকে আছে।
আমরা এখানে এত কিছু পেয়ে অত্যন্ত রোমাঞ্চিত।’
প্রাচীরটি এক ধরণের চুনাপাথর দিয়ে তৈরি। ব্যাসিলিকাটি প্রায় ৪০ মিটার লম্বা, ২০ মিটার প্রস্থ এবং ১২ মিটার উঁচু ছিল। অন্যান্য নিদর্শনও পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শহরের একজন কর্মকর্তার স্ট্যাম্প অঙ্কিত একটি ছাদের টালি।
ব্যাসিলিকা লন্ডনের ফোরামের অংশ ছিল। একটি সামাজিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যার একটি উঠান ছিল ফুটবল মাঠের আকারের প্রায়। জ্যাকসন ব্যাখ্যা করেন, ‘ব্যাসিলিকা হলো একটি টাউন হল। এর সামনে ছিল একটি বড় খোলা বাজারের চত্বর এবং যেখানে বাইরের দিকে দোকান এবং অফিস ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি সেই জায়গা যেখানে ব্যবসা হত, আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হত, এখানে আইন তৈরি করা হত এবং লন্ডন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত।’
৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এটি নির্মিত হয়েছিল। রোমানরা ব্রিটেন আক্রমণ করে এবং শহরের রোমান নাম লন্ডিনিয়াম প্রতিষ্ঠা করার মাত্র কয়েক দশক পরে। কিন্তু প্রথম ব্যাসিলিকা এবং ফোরামটি প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল। তাদের পরিবর্তে আরো একটি বড় দ্বিতীয় ফোরাম তৈরি করা হয়েছিল। এটি প্রতিফলিত করে যে, শহরটি কত দ্রুত আকারে গুরুত্বের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
এই আবিষ্কারের ফলে বর্তমান ভবনের মালিক হার্টশটেন প্রপার্টিজের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে। রোমান ধ্বংসাবশেষ এখন সম্পূর্ণরূপে খনন করা হবে, নতুন অফিসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তবে স্থপতিদের জন্য একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের চারপাশে একটি ভবন পুনর্নির্মাণের কিছু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ।
লন্ডনের স্কয়ার মাইলের রাস্তার নিচে আবিষ্কৃত রোমান ইতিহাসের সর্বশেষ নিদর্শন এটি। জনসাধারণকে এই স্থানগুলো দেখাতে উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চলছে এখন। লন্ডন সিটি কর্পোরেশনের ক্রিস হেওয়ার্ড বলেছেন, তিনি চান আরো বেশি লোক অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে সংযোগটি অনুভব করুক।
সূত্র: বিবিসি