আউয়ালরা শাস্তির আওতায় আসলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে : রাষ্ট্রপক্ষ

SHARE

প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

রবিবার (২৯ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, আউয়ালরা শাস্তির আওতায় আসলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বাভাবিক হবে।

এদিন রিমান্ড শেষে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শন সৈয়দ সাজেদুর রহমান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে বেলা ৩টা পর পুলিশ পাহারায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর হেলমেট, জ্যাকেট ও হাতকড়া খুলে ফেলা হয়। এ সময় আসামিপক্ষে জামিন, কারাগারে ডিভিশন ও চিকিৎসা চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তার আইনজীবী শফিউল আলম বলেন, আসামির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কোন কাজ করেননি। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের সাজার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ মামলায় হাবিবুল আউয়ালের জামিন দিলে জনগণ জানবে দেশে ন্যায়বিচার আছে।
জামিন গেলে তিনি পালাবেন না। আমরা যেকোন শর্তে তার জামিন প্রার্থনা করছি।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন বলেন, সাবেক সিইসি জাতিকে সামনে মধুর বাণী শুনাতেন। সবার আশা ছিলো, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করবেন। কিন্তু তা করেননি।
তিনি সংবিধান ধারা স্বীকৃত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। কেউ পদত্যাগ না করলে জোর করে কেউ পদত্যাগ করানো যায় না। স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। নিজেই স্বীকার করেছেন ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের সময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আসতে কোনো প্রক্রিয়া গ্রহণ করেননি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। রাষ্ট্র প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ করেননি। তাদের গ্রেপ্তার করায় আজ সারা জাতি খুশি। কেন জানেন? তারা গ্রেপ্তার, শাস্তির আওতায় আসলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বাভাবিক হবে। জামিন পেলে আবারো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কাজী হাবিবুল আউয়ালের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এছাড়া কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন ও চিকিৎসার আদেশ দেন।

এর আগে ২৫ জুন রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরদিন ২৬ জুন আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে গত ২২ জুন মামলা করে বিএনপি। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পূর্ণ করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ঘটনার সাক্ষী সব ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যরা।

এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ অফিসারসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরো অন্যান্যরা ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে উল্লেখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদঘাটিত হবে।