বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা: সংকট, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ পথ

SHARE

উপশিরোনাম:
নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবেই বাড়ছে গণতন্ত্রের সংকট

রিপোর্ট: এমারাত হোসেন
সম্পাদক, 24hourbd.com

ভূমিকা:
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি, অন্যদিকে কারচুপি ও অংশগ্রহণহীন নির্বাচন – এই দুই বিপরীত বাস্তবতার মাঝে বন্দি দেশের গণতন্ত্র। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব মিলিয়ে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখন এক গভীর সংকটে।

অংশগ্রহণহীন নির্বাচন ও ভোটার বিমুখতা:
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। ২০২4 সালের নির্বাচনকে অনেকেই ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যেখানে মূল বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে নির্বাচন ছিল একপাক্ষিক, যা ভোটারদের আস্থায় বড় ধাক্কা দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতির হার কমে আসা এই আস্থাহীনতারই প্রতিফলন।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক:
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও, বাস্তবে তাদের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন উঠে আসছে। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে কমিশনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে দ্বৈতনীতি ও দুর্বল ভূমিকার কারণে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থাও কমছে।

রাজনৈতিক সমঝোতার অভাব ও সংঘাতময় পরিবেশ:
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ঘাটতি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বারবার সংকটের মুখে ফেলছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চরম অবিশ্বাস এবং সংঘাতের রাজনীতি নির্বাচনের আগে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। যা ভোটারদের মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

ডিজিটাল ভোটিং ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই প্রযুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার বদলে কারচুপির সুযোগ বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন জনগণের আস্থা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকবে।

সংকট উত্তরণে সম্ভাব্য করণীয়:
১. সর্বদলীয় ঐকমত্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন
২. শক্তিশালী, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন
৩. রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি
৪. ভোটারদের নিরাপত্তা ও আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত
৫. নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা

উপসংহার:
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আজ একটি মোড় ঘোরানো সময়ে দাঁড়িয়ে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও জনগণের আস্থার পুনরুদ্ধার। তা না হলে নির্বাচন হবে শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা, গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুতির আরেক নাম।