ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এ এস এম হান্নান শাহ্ অভিযোগ করেছেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সমান সুযোগতো দূরের কথা, নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের উৎপাতে বিএনপি সমর্থিত অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বাড়িতেই থাকতে পারছেন না। অথচ মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বাড়িতে থাকতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের ১১১তম পর্ব হয়। এবার হান্নান শাহ ছাড়াও অন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা ওয়াহিদ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে কী করা প্রয়োজন? – অনুষ্ঠানের শুরুতে এ প্রশ্ন করেন এক দর্শক।
উত্তরে হান্নান শাহ বলেন, প্রত্যেক প্রার্থী যেন ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পারেন, প্রশাসন থেকে যেন সহযোগিতা পায় এবং কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যেন না হয়- এসব নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী হানা দিচ্ছে এবং কমিশনের কর্মকর্তারা হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, অন্তত সাত দিন আগে সেনাবহিনীকে মোতায়েন করা হোক। কারণ সেনাবাহিনীর ওপর এখনও নিরপেক্ষ থাকার ব্যাপারে আস্থা আছে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নেই।
হান্নান শাহ’র অভিযোগ, লেভেল প্লেইং ফিল্ড বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সমান সুযোগতো দূরের কথা, নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের উৎপাতে বিএনপি সমর্থিত অনেক প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর বাড়িতেই থাকতে পারছেন না। অথচ মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বাড়িতে থাকতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে এর আগেও যে নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন, তারা আজ বেশিরভাগই কারাগারে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। বলেন তিনি।
জিনাত হুদা ওয়াহিদদ বলেন, দিনের পর দিন হরতাল করলে, বার্ণ ইউনিটে কান্নার রোল রেখে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে না দিয়ে বিএনপি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ দাবি করলে তো চলবে না। আর ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে টেনে নিয়ে এসেছি আমরা…। পাশ্চাত্যের কোনো ধারণাকে অন্ধের মতো অনুকরণ করে মডেল হিসেবে নিতে হবে এমন কথা পৃথিবীর কোনো বইতে লেখা নেই।
তার বক্তব্যের উত্তরে সারা হোসেন বলেন, কষ্ট লাগলো এটি শুনে। গণতন্ত্রই তো পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে এসেছে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি কেন এমন কথা বললেন আমার কাছে অবাক লাগে। বিষয়টা এমন যেন- যখন দেখি কোনো কনসেপ্ট বা মাপকাঠির সঙ্গে আমরা মেনে চলতে পারছি না, তখন বলে দেবো সেটি আমাদের জন্য প্রযোজ্য না।
তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকা দরকার। নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ স্বাধীন ভূমিকা নেয়ার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
তার আগে এক দর্শক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার আন্তরিক নয়। একজন মন্ত্রী চট্টগ্রামে বলেছেন যেভাবেই হোক জিততেই হবে। তাহলে কতোটা সুষ্ঠু হবে তা তো বুঝাই যাচ্ছে।
আরেকজন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্যক্রমে মনে হচ্ছে না নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সরকার সমর্থিত অনেক প্রার্থী আচরণবিধি ভাঙলেও তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।