ঝড়ে রাজধানীতে দুজনসহ নিহত ১১

SHARE

jorrরাজধানীতে গতকাল শনিবার রাতে ঝড়ের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হন অন্তত পাঁচজন। রাজধানীর শাহবাগ ও বনানীতে বিশালাকৃতির বিলবোর্ড রাস্তায় পড়ে যান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে।

এ ছাড়া  ঢাকার বাইরে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধায় শিশুসহ নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শহর ও গ্রাম এলাকায় কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিভিন্ন স্থানে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঝড়ের সময় গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে একটি বাস তাড়াহুড়া করে রাস্তার পাশে নেওয়ার সময় পথচারী জাহাঙ্গীর আলমকে (৫০) চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার বাড়ি কুমিল্লায়।

এদিকে ঝড়ের সময় বুড়িগঙ্গায় নৌকা নিয়ে দুটি বড় লঞ্চের মাঝে আশ্রয় নিতে গিয়ে লঞ্চের চাপায় মারা গেছেন একজন মাঝি। তার নাম আবু হানিফ শেখ (৪৫)। তিনি সদরঘাট এলাকায় পারাপারের নৌকা চালান। হানিফ শেখের চাচাতো ভাই মুসলিম শেখ জানান, ঝড়ের সময় বাঁচতে বুড়িগঙ্গায় নোঙর করে রাখা দুটি বড় লঞ্চের মাঝে এসে আশ্রয় নেন হানিফ শেখ। প্রচণ্ড বাতাসে লঞ্চ দুটি চেপে এসে আবু হানিফের নৌকা চুরমার করে তাকেও চাপা দেয়। পরে ঘাটশ্রমিক ও লঞ্চের কর্মীরা লঞ্চের গায়ে লেপ্টে থাকা অবস্থায় হানিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝড়ের সময় গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর শাহবাগে শিশুপার্কের উল্টো দিকে একটি বিলবোর্ড পড়ে দুজন রিকশাচালক আহত হয়েছেন। এরা হলেন তারা মিয়া (৩৩) ও শুকুর আলী (৫০)। তাদের মধ্যে শুকুর আলী মুখমণ্ডল ও বুকে আঘাত পান। তারা মিয়ার ডান হাত ভেঙে গেছে।

একই সময়ে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের বনানীর কাকলীতে একটি গাড়ির ওপর বিলবোর্ড উপড়ে পড়ে। তবে বনানী থানার পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রীরা নিরাপদে বেরিয়ে এসেছেন। রাত ১০টার দিকে যখন পুলিশের সঙ্গে কথা হয়, তখনো গাড়িটি বিলবোর্ডের নিচে চাপা পড়ে ছিল। এতে বিমানবন্দর থেকে মহাখালীর দিকে যান চলাচল ব্যাহত হয়।

ঝড়ের সময় নীলক্ষেত মোড়ে টিনের টুকরো উড়ে এসে মো. জাকারিয়া (২২) নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আহত হয়েছেন। তার মাথার অনেকখানি কেটে গেছে। ঝড়ের সময় দোলাইরপাড়ের দীপ্তির গলিতে ছাদ থেকে ইট পড়ে আবুল হোসেন (৪০) নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আহত হয়েছেন। একইভাবে কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় ভবনের ছাদ থেকে উড়ে আসা প্লাস্টিকের ড্রাম মাথায় পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি (৬৫) গুরুতর আহত হয়েছেন।

একই সময়ে গ্রিন রোডে একটি বহুতল ভবনের প্রায় ৩০ ফুট লম্বা সাইনবোর্ড ফুটপাতে এসে পড়ে।

রাজশাহীতে গতকাল বিকেলে ঝড়ে ঘর ভেঙে, মাটি চাপা পড়ে এবং বজ্রপাতে চারজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের দুজন গৃহবধূ, একজন কৃষক ও একজন জেলে। এদের মধ্যে এক গৃহবধূর নাম জাহানারা বেওয়া (৬০)। বাড়ি জেলার বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে। ওই গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল জলিল জানান, জাহানারা বেওয়া ঝড়ের সময় নিজ ঘরে বসে ছিলেন। এ সময় ঘর ভেঙে পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত জেলের নাম ইমাজ উদ্দিন (৪৫)। তার বাবার নাম আরশাদ আলী। বাড়ি উপজেলার কিশোরপুর গ্রামে। গোদাগাড়ী উপজেলার আশারিয়াদহ গ্রামে ঘরচাপা পড়ে আবদুল মালেকের স্ত্রী মনোয়ারা (৬০) প্রাণ হারান। ঝড়ের সময় বজ্রপাতে পবা উপজেলার বড়গাছি সুবিপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিম (৩২) মারা যান।

বগুড়া শহরের বউবাজার এলাকায় দেয়ালচাপায় এক গৃহবধূ ও এক শিশু মারা গেছে। এরা হলেন ওই এলাকার গৃহবধূ আজিবুন্নেছা (৩৮) ও নজরুল ইসলামের মেয়ে নীলা (৬ মাস)। এ ছাড়া গায়ের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে শাজাহানপুর উপজেলার ক্ষুদ্র ফুলকোট গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে পান্না (২৭) মারা যান। দেয়ালচাপায় সোনাতলা উপজেলার লোহাগড়া গ্রামের মৃত মোফা প্রামাণিকের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫৬) এবং গাছ পড়ে গাবতলী উপজেলার তেলিহাটা গ্রামের আসাদুল ইসলামের স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫) মারা যান।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা, সাতকয়া, শিমুলদাইড়, হরিনাথপুর, পাঁচগাছী, সোনামুখী ও উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া, সলপ, মোহনপুর, পূর্ণিমাগাতী ব্রি-৫৮, ব্রি-২৮ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।