লগো বন্ধ হচ্ছে যবিপ্রবি!

SHARE

jobiঅনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ছদ্মাবরণে ছাত্রলীগের আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য শিক্ষক সমিতির সভার ওপর।

এদিকে, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় এক দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে। এ দিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা বা মিছিল-মিটিং হয়নি।
যবিপ্রবি’র সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত এক প্রকার পাকা হয়েই আছে। উপাচার্য সোমবার সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ফিরছেন। মঙ্গলবার যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর উপাচার্য তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।

জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সাত্তার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক রেখে ক্লাস-পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে, বিশেষ করে শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে, কীভাবে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখব?”

যবিপ্রবির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক হায়াতুজ্জামান মুকুল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল ছুটি ঘোষণার সম্ভাবনাই বেশি। প্রায় সবাই এ ব্যাপারে একমত। উপাচার্য ঢাকা থেকে ফিরে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।”

গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে আনা হতে পারে বলেও ধারণা দেন তিনি।

এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে রোববার বেশ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জরুরি সাধারণ সভা ডেকেছে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনিসুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকবে, নাকি বন্ধ হবে, তা নির্ধারণ করবেন উপাচার্য। শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। তাই শিক্ষক সমিতির সভার সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
তিনি বলেন, “বিরাজমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা অপমানিত বোধ করছেন। এটি স্বস্তিদায়ক কোনো পরিবেশ না। এ পরিস্থিতিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব? এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের মূল গেটে তালা মারা। আমরা পেছনের গেট দিয়ে ঢুকে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারছি।”

এদিকে, সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য তার বিশেষ ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিন ছুটি ঘোষণা করেছেন বলে দাবি ছাত্রলীগ যবিপ্রবি শাখার সহ-সভাপতি ও চলমান আন্দোলনের নেতা শেখ শাকিল আহমেদের।

তবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনিসুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা পিকনিকে গেছে। এ ছাড়া পাওনা ছুটিও রয়েছে। তাই উপাচার্য এক দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছেন। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এ দিন ক্যাম্পাসে কোনো মিছিল-মিটিং হয়নি।

ছাত্রলীগ নেতা শেখ শাকিল আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না থাকায় মিছিল-মিটিং হয়নি। মঙ্গলবার ফের কর্মসূচি পালন করা হবে।”

কথিত দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারণ, ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ, বৈষম্য দূরীকরণ, টেন্ডার-বাণিজ্য বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ছদ্মাবরণে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ শনিবার থেকে রাজনীতিমুক্ত যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং শুরু করে।

অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম না হলেও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা জোর করে ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল-সমাবেশে আনছেন। ক্লাস ও পরীক্ষাকক্ষ থেকে গায়ের জোরে বের করে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে বিপুল সংখ্যক ছাত্রীসহ অনেক ছাত্র ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।

উপাচার্য ড. আবদুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ যবিপ্রবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জামিনে মুক্তি পেয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো যোগ নেই। বিশেষ করে হত্যা মামলার আসামি ও ছাত্রলীগ যবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিম তথাকথিত এ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনবার ফেল করা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া ছেলেটি লেখাপড়া নয়, কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত। আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বাইরে থেকেও ইন্ধন যোগানো হচ্ছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করে উপাচার্য বলেন, “ক্যাম্পাসে মোতায়েন পুলিশের সামনে কীভাবে শিক্ষকরা নাজেহাল হন?”

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনিসুর রহমানও দাবি করেন, তথাকথিত আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ নেই। কয়েকটা ছেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কথা হয়েছে বলে স্বীকার করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সাত্তার।

তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফলাফল ভালো করছে। তাদের অনেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে গেছে উচ্চতর শিক্ষা নিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চায়, দ্রুত শিক্ষা শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে। কিন্তু স্বার্থান্বেষীদের কারণে যদি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘমেয়াদে ছুটি ঘোষণা করতে হয়, তাহলে ক্ষতির মুখে পড়বে মেধাবী শিক্ষার্থীরা।