৭-৮ বছরের মধ্যে সমুদ্র থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

SHARE

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ডেনমার্কের একটি কোম্পানি অফশোরে উইন্ড পাওয়ার (সমুদ্রের বাতাসের শক্তি থেকে নেওয়া শক্তি) করার জন্য ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। অফশোরে গ্যাসের জন্য মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে শেষ পর্যায়ে। গভীর সমুদ্রে কাজ করার জন্য একটা অবস্থানে এসেছি।
আজ শনিবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার-বঙ্গবন্ধুর দর্শন শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি সমুদ্রে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্সন মবিল লিখিতভাবে আবেদন করেছে। আমরা সেটা যাচাই বাছাই করছি। আমাদের সার্ভে কমপ্লিট হলে দরপত্র আহ্বান করবো। আশা করছি সমুদ্র থেকে আগামী ৭-৮ বছরের মধ্যে আমরা গ্যাস পাব।
নসরুল হামিদ বলেন, আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সেটাতে আমরা সফল হয়েছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এটা করতে হলে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি কিন্তু স্থির থাকে না, তাই সময়ে সময়ে মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করতে হয়েছে। অনেক কিছু করতে পেরেছি, অনেক কিছু হয়নি। করোনা পরিস্থিতি না হলে আরও কিছু করা সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, আমাদের আবিষ্কৃত গ্যাস আর মাত্র আট থেকে নয় বছর চলবে, গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো ছোট ছোট। বাপেক্স বাইরে যাবে না, কাউকে ঢুকতে দেবে না, এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাইরে থেকে রিগ ভাড়া করে কূপ খনন করা হবে। ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছি, এতে সাড়ে ছয়শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে, আবার একই সময়ে কিছু কূপের উৎপাদন কমে যাবে। সেটিও সাড়ে ছয়শ এর মতো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আশ্বাস দিতে পারি, গ্যাস সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারব। তবে পরিকল্পিত জোনে শিল্প স্থাপন করতে হবে। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ভোলায় উদ্বৃত্ত গ্যাস রয়েছে, পাইপলাইনের অভাবে আনা যাচ্ছে না। পাইপলাইন করতে নয় থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। পাইপে ৩০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ থাকতে হবে। এখন কি সেই গ্যাস দেওয়া সম্ভব! ভোলায় শিল্প স্থাপন করা হলে এখনই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।
খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সাহস করে পাঁচটি গ্যাস ফিল্ড কিনে নেন। সেসব গ্যাস ফিল্ড থেকে তিন লাখ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে, ২১ বছর লেগেছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে। বঙ্গবন্ধু রিগ কিনেছেন, তার মেয়েও রিগ কিনেছেন।
নসরুল হামিদ বলেন, এসপিএম করা হয়েছে, পানির নিচ দিয়ে ২৬০ কিলোমিটার লাইন করেছি। আগে গভীর সমুদ্রে থাকা জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে ১২ দিন লাগত, এখন ৪৮ ঘণ্টায় তেল খালাস হবে। এতে বছরে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এটা করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। সিনিয়ররা প্রযুক্তি নিতে চায় না, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে, স্মার্ট থিংকিংয়ে যুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, বিরাট সম্ভাবনা আমাদের কয়লায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে স্থানীয় কৃষকের কথা ভাবতে হবে। তাদের পুনর্বাসন কীভাবে সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। ২০৪১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা, এটা নিশ্চিত করতে হলে বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এখন আমাদের জ্বালানি খাত অনেকটা আমদানি নির্ভর, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে ঝুঁকি থেকে যায়। অনেক দেশ রয়েছে যারা জ্বালানি রফতানি করে। আমাদের সে সুযোগ নেই, আমাদের একমাত্র রফতানি পণ্য হচ্ছে শিল্পপণ্য। শিল্পকে অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিশ্চিত করতে হলে নিজস্ব কয়লা উত্তোলন করা জরুরি। এক সময় যে দেশগুলো কয়লার বিরুদ্ধে কথা বলতো, ইউক্রেন যুদ্ধের পর তারা আবার কয়লার দিকে ঝুঁকেছে।