উচ্ছাস, আনন্দ, ব্যঙ্গ, কটাক্ষ এবং সবার উপর, স্বস্তি৷
ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারাকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পরমুহূর্ত থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে যে সব প্রতিক্রিয়ার ঢেউ উঠল তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো ছিল স্বস্তি এবং সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ৷ এটাই হয়তো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া৷ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারায় ‘আপত্তিজনক’ বক্তব্যের সংজ্ঞা এতটাই অস্পষ্ট, যে সব মন্তব্য সাধারণ ভাবে সম্পূর্ণ আইনত সিদ্ধ, তা-ই ‘বেআইনি’ হয়ে উঠতে পারে শুধুমাত্র ইন্টারনেটে বলা হয়েছে বলে৷ এবং তার প্রমাণও মিলেছে গত ৭ বছরে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় শহরজোড়া বন্ধে বিরক্তি প্রকাশ থেকে রাজনীতিকদের নিয়ে ইয়ার্কি, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা হয়ে উঠেছে গ্রেফতারির কারণ৷ আর তাই এই ধারার এমন পরাজয়ের দিনে স্বস্তি প্রকাশ করতে সেই সোশ্যাল মিডিয়াকেই বেছে নিয়েছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা
সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় প্রতিক্রিয়া৷ প্রত্যাশিত ভাবেই প্রথম মুখ খোলেন দীর্ঘ দিন ধরে যারা প্রকাশ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন তারাই৷ ৬৬(এ) ধারার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিল পিপলস ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ৷ তাদের আইনজীবী করুণা নন্দী ফেসবুকে লেখেন, ‘তিন বছর পর সাফল্য এলো৷ বিশ্বাস হচ্ছে না! ধন্যবাদ ভারতের সংবিধান, এখনও আমাদের সম্মান রক্ষা করে চলার জন্য৷’ বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে আবার অভিনন্দন জানিয়েছেন রায়দানকারী বিচারপতি রোহিন্টন নরিম্যানকে৷ ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টে ৩৭৭ ধারাকে বেআইনি ঘোষণা করা হেগড়ের টুইট, ‘নরিম্যানকে বলেছিলাম, বিচারক হলে ভারতে বাক স্বাধীনতা যেন নিশ্চিত করেন৷ তিনি কথা রেখেছেন!’
ঝড় বয়েছে রসিকতারও৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিশানা হয়েছেন যে সব রাজনীতিক ৬৬(এ) ধারার অপব্যবহার ঘটিয়েছেন তারাই৷ টুইটার ব্যবহারকারী সিদ্ধার্থ সিং যেমন নানা ‘আপত্তিজনক’ মন্তব্য লিখে পরীক্ষা করে দেখেছেন কেউ ধরে কি না! তার টুইট, ‘বাল ঠাকরের শেষ যাত্রায় কী ভয়ানক জ্যাম হয়েছিল! আজম খানের মোষগুলো নেহাতই গবেট৷ সিবালকে দেখতে পিটার পেটিগ্রিউয়ের (হ্যারি পটার সিরিজের অন্যতম খলনায়ক) মতো৷’ পাশে হ্যাশট্যাগ, ‘৬৬এ টেস্টিং’৷ আর এক সোশ্যাল সাইট রেডিট-এও ছিল উৎসবের মেজাজ৷ এক ইউজার লেখেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট জিন্দাবাদ! এবার কি আমরা নিশ্চিন্তে আজম খানকে গালাগালি করতে পারি?’
মাউথশাট ডট কমের সিইও ফয়সল ফারুকি এই রায়ে উচ্ছ্বসিত৷ তার কথায়, ‘আজকের রায় দেশকে ডিজিট্যাল ট্রান্সফরমেশনে সাহায্য করবে৷ দেশকে পুরোপুরি ডিজিট্যাল বানানোর জন্য সবেমাত্র উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ এর ফলে অপ্রয়োজনীয় গ্রেফতার, কণ্ঠরোধ হবে৷ তা সত্যিই স্বস্তির৷ ভারত মুক্ত, ভারত নির্ভিক৷’ আরও নানা ওয়েবসাইট সংস্থা সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে উল্লসিত৷
আর সবার শেষে, বাক স্বাধীনতার জয় বলে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে টুইটারের ভারত শাখাও৷