যুদ্ধের মুখে বলিউড৷ স্টার ভার্সেস পরিচালক-প্রযোজক৷ কী এমন হলো? ভবিষ্যত্ই বা কী?
‘এনএইচটেন’-এর প্রযোজকদের তালিকায় আনুশকা শর্মার নাম রয়েছে দেখে অনেকেই বলেছেন, নতুন প্রজন্মের স্টারেরাও এখন কেমন কেরিয়ারের শুরুতেই প্রযোজনায় চলে আসছেন৷ হ্যাঁ, এই কথাটা যে খুব ভুল তা নয়৷ আনুশকা শর্মার মতো করেই এখন বা তার আগে থেকেই ভাবছেন রণবীর কাপুর বা আরও অনেকেই৷ আর দীর্ঘ দিন ধরে যে স্টারেরা বলিউডের আকাশ দখল করে রেখেছেন , সেই শাহরুখ খান, আমির খান, অজয় দেবগনের মতো বিগশট-রা তো কবেই নিজেদের ছবির প্রযোজনায় এসে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত এ তো গেল অভিনেতা বা স্টারেদের প্রযোজক হয়ে ওঠার গল্প৷ কিন্ত্ত এর উল্টো দিকেও একটা গল্প আছে৷ যা স্টারেদের প্রযোজকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হওয়ার অন্য একটা কারণও তুলে ধরেছে
তাই এবার বড়ো পরিচালকদের অনেকেই চাইছেন, স্টারেদের গগনচুম্বী চাহিদায় এবার দাঁড়ি টানা হোক৷ বলিউডের নামজাদা প্রযোজকদের মধ্যে অনেকেই এই মতের পক্ষে৷ সেই দলে রয়েছেন মহেশ ভাট, সুভাষ ঘাই, সুধীর মিশ্রা, মধুর ভান্ডারকরের মতো নির্মাতারা৷ তারা এখন প্রায় দলবদ্ধভাবেই আন্দোলনেই নেমেছেন স্টারেদের লাগামছাড়া চাহিদার বিরুদ্ধে৷ আর এর সূচনাটাই হয়েছে যবে থেকে স্টারেরা ছবির লভ্যাংশ দাবি করতে শুরু করেছেন৷ পরিচালকদের অনেকেই স্টারেদের এই দাবির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন৷ এবার ছবির নির্মাতাদের অনেকেও এককাট্টা হয়ে সেই আওয়াজে গলা মেলাচ্ছেন৷ মহেশ ভাটের ভাই প্রযোজক মুকেশ ভাট জানিয়েছেন, ‘এখন ছবি ফ্লপ হয় না৷ বাজেট ফ্লপ হয়৷ সিনেমা বানাতে যে খরচ হয়, তার প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই খরচ হয় স্টারেদের জন্য৷ এই খরচই আমরা কমাতে চাই৷’ শুধু তাই নয়, স্টারেদের অনেকেরই নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের ওপর তাদের ব্যক্তিগত খরচও প্রযোজকদের বহন করতে হয় বলেও জানিয়েছেন মুকেশ৷ ‘ভাবতে লজ্জা লাগে, বলিউডে এখনও স্টারেদের গাড়ির চালক থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত মেকআপের শিল্পীর খরচও প্রযোজকদেরই দিতে হয়৷ আমরা অনেকে মিলেই ঠিক করেছি, আর নয়’, বলেছেন তিনি৷ মুকেশ ভাট, করন জোহর, ইউটিভির এক কর্ণধার, বিজয় সিং, বিপুল শাহের মতো বিশিষ্ট ইতিমধ্যেই করনের খারের অফিসে এই ইস্যুতে মিটিং করেছেন বলেও শোনা গিয়েছে৷ করন নিজেও স্বীকার করেছেন সেই কথা৷
তবে ব্যাপারটা যে আর সাধারণ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, নিন্দা, দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা টের পাওয়া যাচ্ছে অন্য ভাবে৷ কারণ এবার স্টারেদের ‘স্টারগিরি’র বিরুদ্ধে বেশ সংগঠিতভাবেই যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী গোষ্ঠী৷ এই গোষ্ঠীর তরফে ঠিক করা হয়েছে, স্টারেরা যাতে নিজেদের পারিশ্রমিকের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হন, তার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে৷ প্রসঙ্গত, আজকের সুপারস্টারেরা যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, সেই ১৯৯০ সাল নাগাদ বলিউডে এমনই একটি ফোরাম তৈরি করা হয়েছিল৷ যার কাজ ছিল স্টারেরা যাতে নিজেদের পারিশ্রমিক হিসাবে যা খুশি অঙ্ক না চাইতে পারেন, তা দেখা৷ পরিচালক-প্রযোজকদের এই গোষ্ঠী আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই ফোরামটি যাতে আবার চালু করা যায়, সেই বিষয়ে তারা উদ্যোগ নেবে৷
পরিচালক-প্রযোজক সুভাষ ঘাই জানিয়েছেন, ‘১৯৯০-এর সেই ফোরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বড়ো স্টারেদের সঙ্গে কাজ করবে না৷ কারণ বড়ো স্টারেদের অন্যায্য দাবি মেনে নেবে না৷ শেষ পর্যন্ত স্টারেরাও সেই পোরামের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয়৷’
বলিউডের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী দিনে এই ইস্যুতে বাজার আরও গরম হওয়ার ভালোই আশঙ্কা রয়েছে৷ কারণ সব নির্মাতারাই চাইছেন স্টারের খরচ কমাতে৷ এবং নাম না প্রকাশ পেলেও এমন ঘটনা নাকি ঘটেই গিয়েছে, যেখানে প্রযোজক-পরিচালকরা স্টারের দাবির সামনে শেষ পর্যন্ত মাথা নীচু করেননি৷
পরিস্থিতি এখন যেদিকে চলেছে, তাতে বলিউডের এক বিরাট সংখ্যক প্রযোজক-পরিচালক অর্থনৈতিক কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বড়ো স্টারেদের থেকে৷ কারণ স্টারেদের বিরাট টাকার দাবি৷ পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে বড়ো স্টারেরাও সবাই এবার নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ থেকে বানানো ছবিতেই বেশি করে কাজ করবেন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ তবে আনুশকা শর্মার মতো স্টারও রয়েছেন৷ যিনি একই সঙ্গে আবার প্রযোজনাও শুরু করেছেন৷ তার মতে, ‘ভবিষ্যতে আমি বড়ো স্টার নয়, বড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে চাই৷’