সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

SHARE

du logoঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ভেতরে ৫টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানেই বসানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কিত কিছু ঘটনায় অবশেষে টনক নড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড এর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে পুলিশের সামনেই খুন করা হয় তাকে। এ ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ঢাবি প্রশাসনকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ চায়।

এর আগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিতর্কিত ফোনালাপ ফাঁস হয়, যেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ’ চান বলে গণমাধ্যমে আসে। এতে শঙ্কিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল ও লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে ককটেল-হাতবোমা বিস্ফোরণ ছিল ক্যাম্পাসের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ উদ্যোগ কার্যকর হলে ঢাবি ক্যাম্পাসে কেউ অপরাধমূলক কার্মকাণ্ড করতে সাহস পাবে না। কিংবা করলেও অপরাধ দমন ও শনাক্ত করা সহজ হবে। এমন প্রযুক্তি উন্নতবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঢাবি ক্যাম্পাস চারদিক থেকে উন্মুক্ত। ফলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অবাধ যাতায়াত ক্যাম্পাসে। অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, চোর, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্তরা এ সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। ফলে নিয়মিতই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক, বেড়াতে আসা মানুষজন এমনকি শিক্ষকরা ও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকবারই।

সর্বশেষ ক্যাম্পাসের ভেতর পুলিশের সামনে কীভাবে খুনিরা ঠাণ্ড মাথায় অভিজিৎকে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সব মহলে। প্রশ্নবিদ্ধ হয় ঢাবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অভিযোগ ওঠে পুলিশের দায়িত্বশীলতা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকেও দায়ী করা হয়।

এসবেরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি ও ডিএমপি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো যেমন: টিএসসি, শহীদমিনার, শাহবাগ, কলাভবন, কার্জন হল ও আবাসিক হলগুলোকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।

এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের অভ্যন্তরে ৫টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ভবনগুলোতে ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এসব ক্যামেরার ব্যয়বহুল হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিএমপি কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে লাগানো হবে। ডিএমপি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর খরচ বহন করবে। আর বিভিন্ন ভবন ও হল স্ব স্ব উদ্যোগে লাগাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, আমরা ক্যম্পাসে সবধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। সেজন্যেই যেকোন নাশকতা এড়াতে গোটা ক্যাম্পাসকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করার চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যাটা প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তবে আমরা ডিএমপির সাথে কথা বলেছি। তারা এ ক্ষেত্রে যতটুকু সহায়তা করে তার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাকিটা বহন করবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে ডিএমপির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। আশা করা যায় এতে করে ওইসব এলাকায় অপরাধ দমন ও শনাক্ত করা সহজ হবে।