মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার পরই তাকে ইসরাইল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। সৌজন্যের খাতিরে এমন অনেক রাষ্ট্র প্রধানই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতিও মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের ভিন্ন মাত্রা আছে। মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা মানে আন্তর্জাতিক প্রশ্নে ইসরাইলের মনোবল বৃদ্ধি। ভারতের বিদেশ নীতিতে ইসরাইল চিরকালই ব্রাত্য ছিল। ইসরাইল-প্যালেস্তাইন বিরোধে ভারত বরাবর প্যালেস্তাইনের ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। ভারত স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমতের শরিক। মার্কিন সহযোগিতায় এই দাবি অস্বীকার করে চলেছে ইসরাইল।
এতদসত্ত্বেও চিরকালের অবস্থান বদল করে বাজপেয়ীয় আমলে এনডিএ সরকার প্যালেস্তাইন থেকে সরে আসতে শুরু করে ইসরাইলের দিকে। এমনকি ইসরাইলের চরম অমানবিকতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলির বিরোধিতা করাও বন্ধ হতে থাকে।
আজ ভারত ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্যালেস্তাইনের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। আসলে ইসরাইলের জায়নবাদের সঙ্গে বিজেপি-র হিন্দুত্ববাদের গভীর সাযুজ্য আছে। মূলত জাত্যভিমানকে ভিত্তি করেই জায়নবাদের বিকাশ। এখানে নীতি-আদর্শ, মানবিকতা, ন্যায়ের কোনো জায়গা নেই। বিজেপি-ও হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায় এবং ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। জায়নবাদীদের দুঃসাহস এবং দৃঢ় মানসিকতা হিন্দুত্ববাদীদের মুগ্ধ করে। তাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাজপেয়ী যেমন ইসরাইলকে তাদের আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করেছেন। এখন মোদিও সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।
ক্ষমতায় আসার পর মোদি বিদেশ সফরে অত্যধিক জোর দিয়েছেন। বিদেশী নীতিতে আমূল পরিবর্তন করে ভারতকে বিশ্বে বৃহৎ শক্তিধর ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে দেখতে চান। তাই জোট নিরপেক্ষতার বদলে সাম্রাজ্যবাদী জোটের শরিক হয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুনর্গঠনে জোর দিয়েছেন। এই প্রশ্নে তার লক্ষ্য চীনের পাল্টা শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ। তাই চীনের সঙ্গে কার্যত প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন-বিরোধী পালটা জোট বা মঞ্চ গড়তে চান আমেরিকার মদতে। ফলে এখনো তার ইসরাইল সফর সম্ভব হয়নি।
তাই তিনি চান রাষ্ট্রপতি অন্তত আপাতত সেই ঘাটতি পূরণ করুক। কিন্তু সরকারি প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি খুশি হননি। ইসরাইলের পাশাপাশি প্যালেস্তাইন সফর করে ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে তিনি। প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের শীর্ষনেতা বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্যালেস্তাইনকে একে বারে ছেঁটে ফেলতে চাইছেন না। ফলে একসঙ্গে দু’দেশ সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অবশ্য ইসরাইল থেকে বার্তা এসেছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ইসরাইলের সঙ্গে প্যালেস্তাইন সফর করলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এরপরই সফরের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে প্যালেস্তাইন যাবার অনুমতি কি ইসরাইল থেকে নিতে হচ্ছে? এতদিন জানা ছিল মোদি ভারতকে মার্কিন অধস্তন করতে চাইছেন। এখন দেখা যাচ্ছে ইসরাইলেরও।