‘নকল বিএনপি’ গড়ার আগেই বিভেদ!

SHARE

nokol bnpখালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে বিএনপি গড়ার প্রচেষ্টা চলছে বেশকিছু দিন ধরে। কেউ নিজেদের ‘নতুন’ কেউ আবার নিজেদের ‘আসল বিএনপি’ দাবি করে গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায়ই কথা বলছেন। এরা নিজেদের ‘একই বলয়ের’ দাবি করলেও তাদের কর্মপন্থা ভিন্ন বলে জানিয়েছেন। তবে সাধারণের কাছে এরা ‘নকল বিএনপি’ বলেই পরিচিত।

যারা ‘‘নতুন বিএনপি’’ বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন তারা বহুদিন আগেই দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। বিএনপি এদের দলের লোক মনে না করলেও তারা এখনো দলের আছেন বলে দাবি করছেন।

অন্যদিকে যিনি নিজেকে ‘আসল বিএনপি’র কর্ণধার দাবি করছেন তার বিএনপিতে কোনোকালে কোন পদ ছিল না বলে জানা গেছে। তবে তিনি বিএনপিকে বাঁচাতে চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করতে হাজির হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে নিজেকে তিনি কৃষক দলের সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সাবেক দুই সাংসদ আবু হেনা ও শহীদুল হক জামাল  ‘‘নতুন বিএনপি’’ গড়ার উদ্যোগে সামনের দিকে আছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তারা একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক কয়েকজন সাংসদ তাদের সঙ্গে আছেন। এরা সবাই দল থেকে বহিষ্কৃত। সবাই ছিলেন সংস্কারপন্থি।

‘নকল বিএনপি’ গড়ার পেছনে সরকারের উচ্চ পর্যাধয়ের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

আর নিজেকে ‘আসল বিএনপি’র মুখপাত্র দাবি করছেন জনৈক কামরুল হাসান নাসিম। নিজেকে কৃষক দলের সদস্য ছাড়াও একজন সাংবাদিক ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সামনে আসেন। সে সময় তিনি বর্তমান বিএনপিকে আদর্শচ্যুত উল্লেখ করে ‘আসল বিএনপি’ গঠনের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে বিএনপির চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করবেন বলেও জানান।

পরবর্তিতে আবার ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন কামরুল হাসান। ওইসময় তিনি বিএনপিতে খালেদা-তারেককে অবৈধ দাবি করে খালেদা জিয়াকে দল থেকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। ওই অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে সব কমিটি ভেঙে না দিলে পরের দিন জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত আসল বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে বাধ্য করবে। তবে আলটিমেটামের সময়সীমা পার হলেও খালেদা জিয়া যেমন পদত্যাগ করেননি, তেমনি এ নিয়ে আসল বিএনপির কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।

আর ‘নতুন বিএনপি’ গড়তে যারা কাজ করছেন বলে দাবি করছেন সেই দুই সাবেক এমপি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতেও তৎপর বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন।

সবশেষ মঙ্গলবার বেলা একটা ১৭ মিনিটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে কার্যকরী প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করেন ‘আসল বিএনপি’র মুখপাত্র।

অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক দুই আবু হেনা ও শহীদুল হক জামাল এবং নিজেকে একই বলয়ের বলে দাবি করেছেন। কামরুল হাসান বলেন, “আমরা একই বলয়ের। কিন্তু আমাদের চেষ্টা আলাদা।”

কামরুল হাসান নাসিম আরো বলেন, “এক-এগারোর সময় বিএনপির বেশ কিছু নেতা দলের ভেতর সংস্কার আনার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ করেছিলেন বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায়। আবার কেউ করেছিলেন দলের ভেতর থেকেই আদর্শিক জায়গা থেকে। সেটা সফল হয়নি। ”

‘নতুন বিএনপি’ গড়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আবু হেনা ও জামালরা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করছেন, তার সঙ্গে আমরা একমত না। তবে আমরা একই বলয়ের। আমাদের চেষ্টাটা আলাদা।”

তিনি আরো বলেন, “দলের কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে যারা এই যড়যন্ত্রে রয়েছেন, তাদের সতর্ক করে বলতে চাই, অপেক্ষা করুন, আপনারা সবাই মূল্যায়িত হবেন। আগামী জুলাই মাসে কাউন্সিল হবে। আগামী ১০ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আসল বিএনপি’র মহাসমাবেশ হবে। ওই দিন প্রমাণ করবে ‘আসল বিএনপি’ কত বড় রাজনৈতিক শক্তি।”

লিখিত বক্তব্যে নাসিম আরও বলেন, “এ বছরের শেষার্ধে ভোট না ভাত—এমন একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি ‘ভোট’-এর পক্ষে সমর্থন পড়ে, তবে সরকারকে আগামী বছর একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। আর যদি ‘ভাত’ জিতে যায়, তবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।”

এসময় নাসিম সাংবাদিকরা কোন বিএনপির অনুষ্ঠান কভার করবেন সে বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “আপনারা ঠিক করেন কার কভারেজ করবেন? অবৈধ নেতৃত্বের, না নবধারার কার্যরত আসল সেই বিএনপির। যেই বিএনপির জন্ম হয়েছিল বরেণ্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে।”

ডিসিসি নির্বাচনে ‘আসল বিএনপি’র চমক থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে তারা যাবেন।

এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এটা খুব হাস্যকর যে আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ দলের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে ‘নতুন বিএনপি’ করার কথা কোনো কোনো গণমাধ্যম ফলাও করে প্রকাশ করছে। মনে রাখতে হবে, বিএনপিকে মুসলিম লীগ করার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না।”

অন্যদিনের মতো আজও বেশ কয়েকজন কিশোর ‘আসল বিএনপির’ সংবাদ সম্মেলনে সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ‘আসল বিএনপির’ আত্মপ্রকাশের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এর উদ্যোক্তাকে উন্মাদ বলে দাবি মন্তব্য করেন।