অবশেষে রেলওয়ের বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন কেনা সেই ১০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ)। প্রায় ১৩ মাস পর আজ মঙ্গলবার এসব ইঞ্জিন রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে। গতকাল সোমবার রেলওয়ের এক বিশেষ বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
ওই বৈঠকের পর ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারের বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো) ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক। গতকাল রেল ভবনে হওয়া বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কম্পানি হুন্দাই রোটেমের কাছ থেকে কেনা এসব ইঞ্জিন গত বছরের আগস্টে দেশে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার পর এগুলোর যন্ত্র চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়নি এবং ত্রুটিপূর্ণ এমন কারণ দেখিয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তখনকার পরিচালক গ্রহণ করেননি। তারপর থেকেই ইঞ্জিনগুলো দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় পড়ে ছিল।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইঞ্জিনের মেইন অল্টারনেটর প্রতিস্থাপন করতে হবে। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দাম পুরো পরিশোধ করা হবে না। যদি এই যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন না করে তাহলে এর দামের ১০ গুণ টাকা কেটে রাখা হবে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে এই ইঞ্জিনগুলো কেনা হয়েছে। ঋণচুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে হুন্দাই রোটেমকে ইঞ্জিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে ঋণের বাকি বরাদ্দ বাতিল করার কথা। তাই টাকা ছাড়ের জন্য এডিবিকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিফিল ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’ নামের এই প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক হাসান মনসুর বলেন, ‘আজকেই (গতকাল) ইঞ্জিনগুলো চালানোর আদেশ পৌঁছে যাবে। আগামীকাল (আজ) থেকেই রেলের বহরে ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সব ইঞ্জিন চালানোর চেষ্টা করছি।’
২০১৮ সালের ১৭ মে ১০টি নতুন মিটার গেজ ইঞ্জিন কেনার জন্য হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এগুলোর দাম প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী এরই মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। আর ৬৫ শতাংশ টাকা ইঞ্জিনগুলো বুঝে পাওয়ার পর এবং কার্যকারিতা পরীক্ষার পর বাকি ১০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করার কথা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালকের আপত্তির পর গত বছরের ডিসেম্বরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেই কমিটি চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, ইঞ্জিনগুলো তৈরির ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ছিল তা মানা হয়নি। ইঞ্জিন, অল্টারনেটর, কম্প্রেসর ও ট্রাকশন মোটর এই চারটি মূল যন্ত্র চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। ইঞ্জিনের ব্রেক হর্সপাওয়ার ২২০০বিপিএইচ ও ট্রাকশন হর্সপাওয়ার ২০০০টিএইচপি হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষামূলক চালানোর সময় পাওয়া গেছে যথাক্রমে ২১৭০বিপিএইচ ও ১৯৪২টিএইচপি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি হুন্দাই রোটেম ও প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের সিসিআইসিকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে। তবে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে ইঞ্জিনগুলো নিম্নমানের কি না তা যাচাই করতে চলতি বছরের ২৩ মার্চ কারিগরি একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিও ইঞ্জিনগুলো গ্রহণে আপত্তি জানায়। এরপর স্বাধীন পর্যবেক্ষক ইঞ্জিনগুলো পরীক্ষা করে গ্রহণের পক্ষে মত দেয়।
গতকাল বৈঠকের পর লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ প্রকল্পের পরিচালক হাসান মনসুর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো) এবং পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালককে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এডিবির অর্থায়নে কেনা ১০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে সংযোজন করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হলো।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলকে এখন হুন্দাই রোটেমকে বাকি টাকার ৬৫ শতাংশ দিতে হবে। অল্টারনেটর প্রতিস্থাপনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে বাকি ১০ শতাংশও পরিশোধ করা হবে। তবে যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন না করলে এর দামের ১০ গুণ টাকা কেটে রাখা হবে। যন্ত্রটির দাম ২ কোটি ২০ লাখ থেকে আড়াই কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২২ থেকে ২৫ কোটি টাকা কেটে রাখা হবে।