কতটা গরম সহ্য করতে পারেন একজন খেলোয়াড়?

SHARE

katar fকাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল গরমের কারণে জুন-জুলাই মাস থেকে সরিয়ে নিয়ে নভেম্বর ডিসেম্বরে করার সুপারিশ করেছে ফিফার এক কমিটি।

কাতারে বছরের ওই সময়টায় তাপমাত্র ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। ওই গরমে ফুটবল খেলা বেশির ভাগ দেশের খেলোয়াড়ের পক্ষেই সম্ভব নয়।

কাতারের আয়োজকরা বলেছিলেন তারা পুরো স্টেডিয়াম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার ব্যবস্থা করবেন – যাতে তাপমাত্র কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু সে তো মাঠের ভেতরে। মাঠের বাইরে দর্শকরা সমবেত হবেন কিভাবে?

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কাতারের গরমে সত্যি কি ফুটবল খেলা সম্ভব? একজন খেলোয়াড় কতটা গরম সহ্য করতে পারেন? কতটা গরম পড়লে খেলাধুলা অসম্ভব হয়ে পড়ে? ইতিহাস কি বলে?

ফুটবল: যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ
সত্যি কথা হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলও যে প্রচন্ড গরমের মধ্যে হয় নি তা নয়। যেমন মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালে, এবং জার্মানিতে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের সময়ও তীব্র গরম পড়েছিল।

কিন্তু সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের সময়।

ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে যেদিন আয়ারল্যান্ড আর মেক্সিকোর খেলা হচ্ছে , তখন স্টেডিয়ামে তাপমাত্রা উঠেছিল ১১৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালের কাতারের চাইতে কম কিছু নয়।

আয়ারল্যান্ডের গোলকিপার এ্যালান কেলি বলেছিলেন, “আমি জানিনা ওই রকম গরমের মধ্যে কিভাবে ফুটবল খেলা হতে পারে। আমি বেঞ্চে বসেই অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আর যারা মাঠে খেলছিল তাদের কেমন লাগছিল আমি জানি না।”

সেবার ফিফা খেলোয়াড়দের পানি খাবার বিরতিও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।

ফলে আয়ারল্যান্ড অনুশীলনও করেছিল পানি না খেয়ে ফুটবল খেলার। কিন্তু তার পরও মেক্সিকোর সাথে পেরে ওঠে নি। কারণ মেক্সিকানরা এমন গরমে খেলতে অভ্যস্ত।

টেনিস: ২০১৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন
মেলবোর্নে ২০১৪ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিসের সময় পর পর চারদিন তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। ওই এলাকায় নাকি ১০০ বছরেও এমন তাপপ্রবাহ হয়নি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে খেলতে গিয়ে বহু খেলোয়াড়ই সেবার খেলার মধ্যে বমি করেছিলেন। কারো কারো জুতোর রাবারের সোল গলে গিয়েছিল।

ইয়ারোস্লাভা শেভদোভাকে নিতে হয়েছিল জরুরি চিকিৎসা। জেলেনা জানকোভিচ, আর স্লোয়ান স্টিফেন্সের পিঠ পুড়ে গিয়ে গিয়েছিল।

কানাডিয়ান খেলোয়াড় ফ্রাংক ডানসেভিচ দেড় সেট খেলার পরই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ক্রোয়াশিয়ার ইভান ডোডিগের মনে হচ্ছিল তিনি বোধহয় মারা যাচ্ছেন।

পরের বছর আয়োজকরা অন্তত একটি কোর্টের ওপর ছাদ লাগিয়েছিলেন, বেশি গরম পড়লে খেলা বন্ধ রাখার নতুন নিয়মও করা হয়েছিল।

ফরমূলা ওয়ান: ডালাস গ্রাঁ প্রি
বাহরাইন আর আবুধাবিতে ২০০৪ ও ২০০৫ সালেও প্রচস্ড গরমের মধ্যে ফরমুলা ওয়ান কার রেসিং হয়েছে।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয় ১৯৮৪ সালে ডালাসের ফরমূলা ওয়ানের সময়। ৪০ ডিগ্রিরও বেশি তাপমাত্রায় রেসিং ট্র্যাকটাই গলে যেতে শুরু করে।

কয়েকটি কোয়ালিফাইং ল্যাপের পর কংক্রিটের আস্তরণ ভেঙে যেতে শুরু করে। রাতে রাতে মেরামত করে রেস চালানো হয়।

তৃতীয় স্থান পাওয়া নাইজেল ম্যানসেল রেস শেষে গরমে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।

এথেন্স: ২০০৪ অলিম্পিকস
সে বছর এথেন্স অলিম্পিকসের সময়ও তীব্র গরম পড়েছিল।

সেবার ম্যারাথনে সম্ভাব্য জয়ীদের মধ্যে এক নম্বরে যার নাম ছিল তিনি ব্রিটেনের পলা র্যাডক্লিফ।

এর আগে তিনি দুবার বিশ্বরেকর্ড ভাঙলেও এথেন্সের গরমে তিনি কাবু হয়ে পড়েন। এতটাই যে তিনি পুরো ২৬ মাইল দৌড়াতেও পারেন নি।

২২ মাইলেল মাথায় তাকে থেমে যেতে হয় – যা তখন ছিল এক বিরাট আপসেট।– বিবিসি