কুড়িগ্রামে সাংবাদিকের গায়ে মদ ঢেলে নির্যাতন

SHARE

kurigramরৌমারী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে রৌমারী থেকে প্রকাশিত মাসিক উত্তর চিত্র পত্রিকার বার্তা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সাজুকে সাজানো মামলায় আটক করা হয়েছে। পরে পুলিশ তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে শরীরে মদ ঢেলে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে প্রকাশ্য উপজেলা সদরে ঘুরিয়েছে। ন্যাককারজনক এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ সচেতন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ইসলামি ব্যাংকের নিচতলায় মাসিক উত্তর চিত্র পত্রিকার কার্যালয়ে সাজু পত্রিকার কাজ করছিলেন। এ সময় রৌমারী থানার এসআই জিয়াউল হকের নেতৃত্বে চারজন পুলিশ তার কার্যালয়ে ঢুকে গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় পুলিশের হাতে থাকা ব্যাগ থেকে একটি মদের বোতল বের করে তার শরীরে ঢেলে দিয়ে দুহাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টেনে হিচড়ে বের করে। এ ঘটনার সময় বাজারের বিপুল সংখ্যক লোক সেখানে জড়ো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আগে থেকে সেখানে দাড়িয়ে থাকা ক্ষিপ্ত ওসি সোহরাব হোসেন তাকে চড়থাপ্পড় ও লাথি মারতে মারতে প্রকাশ্য বাজারে ঘোরান।

উপস্থিত লোকজন আটকের কারণ জানতে চাইলে ওসি তাদের বলেন, “মদ পান করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

পুলিশ রাত দেড়টার দিকে গ্রেফতারকৃত সাংবাদিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির করে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হান্নান এর দফতরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেয়ার চেষ্টা করে।

ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধের বিষয় জানতে চাইলে আটক সাংবাদিক নিজেকে নিরাপরাধ বলে দাবি করেন। এ সময় ক্ষিপ্ত ওসি বিচারকের সামনেই তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে দোষ স্বীকার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিচারক মদপানের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে কোনো সাজা না দিয়ে ফেরৎ পাঠান।

এরপর পুলিশ মদ পানের সাজানো মামলা দিয়ে শনিবার তাকে কুড়িগ্রাম জেল হাজাতে পাঠায়।

আটক সাজু ও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তলাগোয়া রৌমারী থানা এলাকায় ওসি শামিমের নেতৃত্বে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। এসব দুর্নীতির খবর একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে ওসি শামিমের বদলি হয়। তখন থেকে খবর প্রকাশের জন্য পুলিশ মূলত সাজুকেই দায়ী করে আসছিল। এরই জের হিসেবে সাজুকে গ্রেফতার করে হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান ওসি সোহরাব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মদ খাওয়া অবস্থায় ওই সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।”

শারীরিক নির্যাতনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা ওসি বলেন, “পুলিশী কাজে বাঁধা দেয়ায় তাকে  দুএকটি চড়থাপ্পড় মারা হয়েছে।

রৌমারী থেকে প্রকাশিত মাসিক উত্তর চিত্র পত্রিকার বার্তা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সাজুকে অন্যায়ভাবে আটক ও নির্যাতনের প্রতিবাদে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সাংবাদিক সমাজ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। রৌমারী প্রেস ক্লাব ও রাজীবপুর প্রেস ক্লাব এর উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা করে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ।

শনিবার রৌমারী প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রাজু। বক্তব্য রাখেন দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক কুদ্দুস বিশ্বাস, সাংবাদিক এসএম সাদিক হোসেন, নুরুল আমিন, আশরাফুজ্জামান, আনিচুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আমির হোসেন, সহিজল ইসলাম, জিতেন চন্দ্রদাস, মুক্তার হোসেন।

বক্তরা রৌমারী থানার ওসি সোহরাব হোসেন, এসআই জিয়াউল ইসলাম ও এএসআই ফারুক হোসেনের শাস্তি দাবি করেন।

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম সাজুকে নিঃশর্ত ভাবে মুক্তির দাবিতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।