বলিউড স্টারদের সেলফি ম্যানিয়া!

SHARE

aliya selfiদেশ-বিদেশ সর্বত্র এখন সেলফি ম্যানিয়া তুঙ্গে! বিশেষ করে কোনও অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি বা প্রমোশনাল ইভেন্টে গিয়ে স্টাররা এন্তার সেলফি তুলছেন এবং তা অবাধে পোস্ট করছেন তাদের বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং প্রোফাইলে। কিন্তু হঠাৎ এই সেলফি ম্যানিয়া কেন প্রায় এপিডেমিকের মতো ছড়িয়ে পড়ল? আর শুধু যে নিজেদের সেলফি পোস্ট করছেন তা তো নয়, সাংবাদিকদের সঙ্গে তোলা সেলফিও ডিমান্ড গ্রাফের চূড়ায়! তবে ওই যে একবার ‘কেন’  মাথায় ঢুকেছে, যতক্ষণ না তার একটা গতি করতে না পারা পর্যন্ত শান্তিতে বসার উপায়ই নেই!

প্রশ্নটা করেই ফেললাম নতুন প্রজন্মের এক তারকাকে। সম্প্রতি তার একটি ছবি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে সাংবাদিকদের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্যে তারা বলেন নাকি কিছু কিছু সাংবাদিক নিজেরাই আগ বাড়িয়ে সেলফি তুলতে অনুরোধ করেন? উত্তরে খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তিনি জবাব দিলেন, ‘আরে না, না আমরাই সেলফি তোলার জন্যে সাংবাদিকদের অনুরোধ করি।’ কিন্তু এইটুকু শুনলে তো আর আমার জিজ্ঞাসা মেটে না। তাই আবার প্রশ্ন করলাম… কেন?

‘কোনও একটি ফ্রেন্ডলি ইন্টারভিউয়ের পরে আমরা সাধারণত সেই সাংবাদিককে অনুরোধ করি আমাদের সঙ্গে একটি সেলফি তোলার জন্যে। ফোন নম্বর আদানপ্রদানও করে থাকি। আশা করি যে সেই সাংবাদিক তার ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে এই ছবি পোস্ট করবেন। তবে আমরা সেই ছবির লিঙ্ক রিপোস্ট করি না। শুধু সাক্ষাত্কারের লিঙ্ক থাকলে সেটি রিপোস্ট বা রি-টুইট করি।’

এই উত্তরের পরেও আমি আরও একবার জিজ্ঞাসা করলাম ‘কেন’? তখন খানিকটা বিরক্ত হয়েই সেই তারকা জবাব দিলেন (যদিও ঠোঁটের কোণে ঝোলানো ছিল পরিচিত সেই হাসি), ‘ আপনি বোধহয় কোনো ফিল্ম পিআর-এর আয়োজিত ইভেন্টে যাননি কখনও! সেখানে যাওয়া আসা থাকলে বুঝতে পারতেন কেন আমরা এমন ব্যবহার করি। সাংবাদিকদের সঙ্গে ছবি তোলা বা তাদের ছোট খাটো ফিল্ম মার্চেন্ডাইজ উপহার দেওয়া পিআর স্ট্র্যাটেজির মধ্যেই পড়ে।’

এই কথায় মনে পড়ে গেল, বেশ কয়েক বছর আগে রণবীর কপুর একবার একটি সংবাদপত্রের অফিসে গিয়েছিলেন ছবির প্রচারে। সেখানে এন্টারটেনমেন্ট সাপলিমেন্টের প্রত্যেক সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করেন। কথায় কথায় এক সাংবাদিক রণবীর গলায় পরা একটি চেনের প্রশংসা করেছিলেন। রণবীর তৎক্ষণাৎ সেই গোল্ড প্লেটেড সোনার চেনটি খুলে উপহার দেন সাংবাদিককে। যদিও তিনি প্রথমে কিছুতেই সেই উপহার নিতে চাননি, কিন্তু পরে রণবীরের অনুরোধের কাছে হার মানতে বাধ্য হন! এমনকি শাহরুখ খানের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন তারাও জানেন, কিং খান যেদিন মুডে থাকেন সেদিন তিনি সাংবাদিকদের রীতিমতো অনুরোধ করেন তার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্যে!

এবার আপনারা প্রশ্ন করতেই পারেন, সাংবাদিকরা যদি এমন এক দুটো ছবি তুলে নিজেদের সোশাল নেটওয়ার্কিং পেজে আপলোড করেন, তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কী এমন ঘটল! মহাভারত অশুদ্ধ হবে কি না জানি না, তবে কাজ প্রভাবিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ সাংবাদিকরা যখন কোনো সেলেব-এর সাক্ষাৎকার নিতে যান, তখন তিনি শুধুমাত্রই একজন ‘সাবজেক্ট’। কিন্তু সেই সাংবাদিক যদি তার সাবজেক্টের মোহে পড়ে যান, তাহলে যথাযথ রিপোর্ট লেখা একটু অসুবিধের হয়ে দাঁড়াবে বই কি! ঘোড়া ঘাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে যেমন ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে, এ ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। তবে হ্যাঁ, কাজের বাইরে কোনো সোশাল গ্যাদারিং-এ দেখা হলে অবশ্য সমীকরণটা পাল্টে যায়।