নাশকতায় অর্থদাতা ২২ প্রতিষ্ঠান

SHARE

bus fire17বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা ২২টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অর্থদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার ও হাসপাতাল রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশের মালিক জামায়াতের নেতা ও সমর্থকরা। গোয়েন্দারা জানান, এ পর্যন্ত ওই ২২ প্রতিষ্ঠান থেকে নাশকতায় পরিকল্পনাকারীদের হাতে অর্ধকোটি টাকা গেছে। গাড়িতে অগি্নসংযোগ, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা তৈরি ও তা নিক্ষেপের কাজে এ টাকা ব্যয় হচ্ছে। তারা বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। সহিংসতায় অর্থায়নের বিষয়ে সারাদেশে ব্যাংকগুলোকে গতকাল সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে চলমান সন্ত্রাসে অর্থদাতা হিসেবে একটি বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাসকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখা হয়। এর পর ওই দূতাবাসের কর্মকর্তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এবার দেশের ২২টি প্রতিষ্ঠানের নাম নাশকতায় অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
গতকাল মঙ্গলবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের (ক্যামেলকো) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বেশ কিছু জরুরি নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে সহিংসতায় কেউ যেন অর্থ জোগান দিতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে যেসব জেলায় বেশি সহিংসতা হচ্ছে, সেখানকার ব্যাংক গ্রাহকদের গত ছয় মাসের লেনদেন পর্যালোচনা করে কোনো অস্বাভাবিকতা পেলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাপারে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি শাখার সব কর্মকর্তাকে আজ বুধবারের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অবহিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জঙ্গিবাদের অর্থের অনুসন্ধানে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে চলমান নাশকতায় অর্থদাতাদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। নাশকতায় অর্থদাতাদের তালিকা তৈরির কথা বলা হয়েছিল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চলমান নাশকতায় অর্থ জোগানদাতা ২২টি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে। নাশকতার বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে।
৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে জঙ্গি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যেন অর্থায়ন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্যোগ নিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত বৈঠকে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যাংকগুলোকে সন্দেহজনক লেনদেন কঠোরভাবে তদারক করতে হবে। আর এ বিষয় নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংকের প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তাকে। তারা সেটি বিশেষভাবে তদারক করছেন কি-না, তা যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিএফআইইউর প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে ব্যাংকারের দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়ে বিএফআইইউর উপপ্রধান ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমানও বক্তব্য দেন।
জানতে চাইলে আবু হেনা মো. রাজী হাসান সমকালকে বলেন, দেশে এখন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে। সেখানে ব্যাংকের মাধ্যমে যেন কোনো ধরনের অর্থায়ন না হয়, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয়ে সম্প্রতি তারা কিছু অভিযোগ পেয়েছেন।
সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী ১৯টি ব্যাংক ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের নিয়ে বৈঠক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বৈঠকের কয়েক দিন পর সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে কার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন হলো, তা বোঝার সুবিধার্থে ১০ দিনের মধ্যে সব গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি (কেওয়াইসি) নিশ্চিত করতে বলা হয়। কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটলে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে বলা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা উলি্লখিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নাশকতার কাজে সরাসরি টাকা পাচ্ছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা নাশকতার কাজে টাকা পেয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে।
ডিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও অপ্রচলিত নানা মাধ্যমে এসব টাকা দিয়েছে। ফলে এসব টাকা লেনদেনের ব্যাংকিং কাগজ পাওয়া দুষ্কর। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।