সেই শম্পার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী, চালাতে হবে না ভ্যান

SHARE

সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু দরিদ্র বাবার চিকিৎসার টাকার রোজগারে আর রিকশাভ্যান চালাতে হবে না জামালপুরের কেন্দুয়া ইউনিয়নের নাকাটি গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শম্পা খাতুনকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব, ফেসবুক ও কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নজরে আসে সবার। পরে শিশুটির বাবার চিকিৎসা, পাকাঘর নির্মাণ, লেখাপড়া ও পরিবারের আয়ের উৎসসহ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার সকালে শম্পাদের জন্য বরাদ্দের পাকাঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন ও কেন্দুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মনজুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অসহায় এই পরিবারটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক শিশু শম্পাদের বাড়িতে যান এবং অসহায় পরিবারের সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারী দরিদ্র রিকশাভ্যানচালক শফিুকল ইসলাম ভাসানীর চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের রিকশাভ্যান চালিয়ে তার বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ মেটানোর জন্য টাকা রোজগারের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অসহায় এই পরিবারটির জন্য দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারী রিকশাভ্যানচালক শফিকুল ইসলাকে বরাদ্দ দেওয়া ঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, শম্পার বাবা শফিকুলকে আজই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে তার প্রয়োজনীয় সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে অসহায় এই পরিবারটির আয়ের উৎস হিসেবে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়ার এবং শিশু শম্পার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাসহ পরিবারটির সবকিছুর ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অ্যাম্বুলেন্সের করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় শম্পার বাবা দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারী রিকশাভ্যানচালক শফিকুল ইসলামকে।

সহায়তা পাওয়ায় শম্পা ও তার বাবা-মা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এতকিছু সহায়তা পেয়ে আনন্দের মুহূর্তে শম্পা ও তার বাবা-মায়ের কান্না থামাতে পারছিল না কেউ। এ সময় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ছোট মেয়েটার কষ্ট দূর করে দিলেন। আমাদের একটা ঘর দিলেন। আমার চিকিৎসা করাবেন। এতকিছু পামু তা কল্পনাও করি নাই। আল্লাহয় প্রধানমন্ত্রীরে মেলা দিন বাঁচায়ে রাখুক, আমি সেই দোয়াই করি।

প্রসঙ্গত, নাকাটি গ্রামের দরিদ্র রিকশাভ্যানচালক শফিকুল বছর পাঁচেক আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তার এক পা ভেঙে যায়। পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করান তিনি। এতে তার সবকিছু বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তাদের সংসারে দুই মেয়ের মধ্যে শম্পার বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী নেবুজা বেগম ও শম্পাকে নিয়ে খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলেন শফিকুল। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালানোর খরচ ছাড়াও বাবার ওষুধ কেনার টাকা রোজগারের জন্য দেড় বছর আগে থেকে বাবার পেশায় হাল ধরে প্রতিদিন রিকশাভ্যান চালাতো শম্পা। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পাওয়ায় শম্পাকে এখন আর রিকশাভ্যান চালাতে হবে না।