ব্যায়াম হিসেবে দৌড়ানো যে খুব ভালো তার ব্য্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। আর তাই কতখানি দৌড়ানো যাবে, তারও রয়েছে একটি সীমা। দেখা যায়, অতিরিক্ত দৌড়ানোর ফলে কমে যায় মানুষের আয়ু।
খুব বেশি দূরত্ব দৌড়ানো অথবা দ্রুত দৌড়ানো দুই-ই আয়ু কমিয়ে দিতে সক্ষম। দেখা যায়, এক সপ্তাহে বিশ মাইলের বেশি দৌড়ানো অথবা ঘণ্টায় ৭.৫ মাইল দৌড়ানোর কারণে এভাবে আয়ু কমে যেতে পারে। যারা এর চাইতে কম দূরত্ব বা ধীরে দৌড়ান, তাদের আয়ু বেশি হয়। অর্থাৎ দূরত্ব এবং গতি যত বাড়ে, আয়ু তত কমে। এর থেকে পাওয়া স্বাস্থ্য উপকারিতাও কমে যেতে শুরু করে একই ভাবে। এর কারণ হিসেবে ধারনা করা হয়, বেশি দৌড়ানোর ফলে নিশ্চয়ই হৃদয়ের ওপর পড়ে নেতিবাচক প্রভাব।
যারা দৌড়াতে ভালবাসেন, তারা যে এই তথ্যকে ভালো চোখে দেখবেন না তা জানা কথা। ২০১২ সালে একটি গবেষণায় জানা গিয়েছিলো যে প্রচুর দৌড়ানোর ফলে আয়ু কমে যেতে থাকে। এই গবেষণার সমালোচনা করে তারা বলেন যে, ধূমপান, শরীরের ওজন এবং বিএমআই, রক্তচাপ এসব ব্যাপার বিবেচনায় রাখা হয় নি। এ কারণে ডক্টর মাতসুমুরার পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় এই সব কিছু মাথায় রেখেই আয়ুর ওপর দৌড়ানোর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। পেনসিল্ভেনিয়ার লেই ভ্যালি হেলথ নেটওয়ার্কের কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের কো-ডিরেক্টর মাতসুমুরা বলেন, অন্যান্য সব প্রভাবক মাথায় রেখেই দৌড়ানোর ফলাফল তিনি দেখতে চান। কারণ দূরপাল্লার দৌড়বিদদের কম আয়ুর কারণ আসলে কি, তা জানতে উৎসুক ছিলেন তিনি।
এ গবেষণার জন্য ৩,৮০০ জন দৌড়বিদের জীবন এবং অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাতসুমুরা দেখেন, এসব দৌড়বিদের আসলে অস্বাভাবিক কোনো অসুস্থতা দেখা দেয় না অথবা তাদের দৈনন্দিন জীবনেও স্বাভাবিকের বাইরে কোনো অভ্যাস দেখা যায় না। মূলতও, বেশি দৌড়ানো এবং কম দৌড়ানো মানুষের জীবনের মাঝে লক্ষণীয় কোনো রকমের পার্থক্যই থাকে না। অন্যদের সাথে তুলনায় তাদের ধূমপান, ওষুধ গ্রহণ, অসুস্থতা সব কিছুই ছিলো স্বাভাবিক। তার পরেও কেন তাদের আয়ু কম হয়? এর জন্য অতিরিক্ত দৌড়ানো ছাড়া আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
ঠিক কি কারণে দৌড়ানোর ফলে আমাদের আয়ু কমে যায়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় নি এবং এ নিয়ে প্রয়োজন আরও বিশদ গবেষণা। কিন্তু নিজ নিজ স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে আমাদের উচিত হলো দৌড়ানো কমিয়ে মাঝারি মাত্রায় নিয়ে আসা। এখানে অবশ্য বিতর্কের সুযোগ আছে। ঠিক কতখানি দৌড়ানকে “মাঝারি” মাত্রা বলে ধরা যাবে তা নিয়ে একেক বিশেষজ্ঞের একেক রকম মতামত। কেউ বলেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দৌড়ানই স্বাস্থ্যকর, কারও মতে এই মাত্রা কম বা বেশি। তবে নিরাপদ থাকার জন্য এটা বলা যায়, নিয়মিত ম্যারাথন জাতীয় দৌড় করে নিজেকে ক্লান্ত না করাটাই ভালো। নিজের শরীরের কথা মাথায় রেখে ব্যাথা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি ছাড়া যতটুকু দৌড় সহ্য করা যায়, ততটুকুই ভালো। এই গবেষণার মানে এই নয় যে দৌড় একেবারে ছেড়ে দিতে হবে। পরিমিত দৌড়ানোর ফলে স্বাস্থ্য ভালো হয়ে যায়। শুধু মাথায় রাখতে হবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়।