বিয়ে-চাকরির আগে ক্যান্সার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

SHARE

বিয়ে, চাকরি বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে ক্যান্সার স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এমন উদ্যোগ নিলে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব হবে, আর এতে দেশের ক্যান্সার চিকিৎসায় ঘটবে বড় ধরনের বিপ্লব।

আজ (শুক্রবার) রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে অনকোলজি ক্লাব আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কংগ্রেস–২০২৫-এর সমাপনী দিনে এই আহ্বান জানান তারা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এএফএম কামাল উদ্দিন। তার গবেষণায় উঠে এসেছে— বাংলাদেশে ক্যান্সার শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা অবকাঠামো এখনো পর্যাপ্ত নয়। ফলে অধিকাংশ রোগী শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে ১ লাখ ৮৪ হাজার ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার জন্য অন্তত ২০৯টি রেডিওথেরাপি মেশিন প্রয়োজন, কিন্তু দেশে আছে মাত্র ২৯টি। এই সীমিত সক্ষমতায় বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

ডা. কামাল উদ্দিনের মতে, ক্যান্সার চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন রেডিওথেরাপি ইউনিট স্থাপন জরুরি, পাশাপাশি স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তের হার বহুগুণে বাড়বে।

একই আলোচনায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এম. সাইফুল হক বলেন, “ক্যান্সার চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদি নীতি ছাড়া সাফল্য আসবে না। সরকারের উচিত হবে ইনিশিয়াল ব্যয় নয়, ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে এই খাতকে দেখা।” তিনি আরও বলেন, “ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সচেতনতা, যেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবচেয়ে বড়।”

কনফারেন্সের সদস্য সচিব ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন বলেন, “ক্যান্সার জয় করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে সাংবাদিকরা যদি জনগণের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেন, তাহলে ক্যান্সার প্রতিরোধ অনেক সহজ হবে।”

সমাপনী অনুষ্ঠানে অনকোলজি ক্লাব বাংলাদেশ ও ক্যান্সার কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ হাই বলেন, “বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছে। তাই ক্যান্সার মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া বিকল্প নেই।”

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিকায়ন এবং দক্ষ জনবল তৈরিই অনকোলজি ক্লাবের প্রধান লক্ষ্য।

এবারের কনফারেন্সে বিশ্বের ১৬টি দেশের ৩১ জন খ্যাতনামা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞসহ মোট ১২০০ জন চিকিৎসক, গবেষক ও স্বাস্থ্যপেশাজীবী অংশ নেন। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল ইতালির বলোনিয়া ইউনিভার্সিটি, সিংহেলথ সিঙ্গাপুর, ও গ্লোবাল হেলথ ক্যাটালিস্ট। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের খ্যাতনামা ক্যান্সার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরাও এতে অংশ নেন।