প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা পেয়ে ১০ লাখ পরিবার উপকৃত

SHARE

দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে এককালীন আড়াই হাজার টাকা বিতরণ কর্মসূচিতে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পরিবার উপকৃত হয়েছেন। এসব পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পেয়ে গেছেন। টাকা পাঠানোর এ প্রক্রিয়া চলমান রাখার সাথে সাথে তালিকা নির্ভুল করার কাজও চলছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেবার কারণেই তালিকার প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যাপক ত্রুটি ও অনিয়ম ধরা পড়ে। এর ফলে এবার ত্রাণের সুবিধাভোগীদের জন্য একটি নির্ভুল ডটোবেজ তৈরির পথও প্রশস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে টাঙ্গাইল মডেল-এর কথাও স্মরণ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী সঠিক ব্যক্তির কাছে সরকারের মানবিক সহায়তা পৌঁছনোর লক্ষ্যে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

প্রাথমিকভাবে সরকারের ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস-এর ১০ টাকা কেজি চাল দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্বচ্ছভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তির সহায়তায় উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পাবনার ঈশ্বরদী, কুমিল্লার দেবীদার, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী, নাটোরের সিংড়াসহ ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জ জেলায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে গ্রহণ করা এসব উদ্যোগ বড় আকারে ও কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার না হওয়ায় মানবিক সহায়তা বিতরণে অসংগতি থেকেই যায়।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের উদ্যোগে প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার করে একটিমাত্র স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দিতে টাঙ্গাইল, বরগুনা, নরসিংদী, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নিযুক্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের পাঁচ জন দক্ষ ও পেশাদার প্রেগ্রামারের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়। ওই টিমের মাধ্যমে তৈরি হয় সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ক্যামস। এই সিস্টেমের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্য একটি ইউনিক কিউ আর কোড সম্বলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে পরে সব মন্ত্রণালয়ের সব ধরণের মানবিক সহায়তা গ্রহণ করা যাবে।

মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ক্যামস মোবাইল অ্যাপস-এ লগইন করে কিউ আর কোড স্ক্র্যান-এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক উপকারভোগীর পরিচয় নিশ্চিত করে মানবিক সহায়তা দিতে পারবে। সকল মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব ড্যাশবোর্ড থেকে সংশ্লিষ্ট মানবিক সহায়তার সকল তথ্য দেখতে পাবেন।

গত ২৩ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে এই টাঙ্গাইল মডেল বা সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উপস্থাপন করা হয়। এরপর টাঙ্গাইল জেলার সবগুলো উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলায় এর সফল পাইলটিং সম্পন্ন হয়। এরপর এ মডেল কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য গৃহীত হয় এবং গত ২ মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে সারা দেশে সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে একটি পত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে সফটওয়্যারটি সারাদেশে একযোগে ব্যবহারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এদিকে তালিকার ত্রুটি সম্পর্কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই দ্রুত এই ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। আমাদের ‘পরিচয়’ নামে যে গেটওয়ে আছে তাতেই এই ত্রুটি ধরা পড়ে। সুভিধাভোগীদের তালিকার প্রায় ১৭ শতাংশে তথ্যগত ত্রুটি শনাক্ত হয়। উপকারভোগীর নাম, পরিচয়, জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বারে এই ত্রুটি পাওয়া যায়। এটি প্রধানমন্ত্রী দপ্তরকে জানানো হয়।’

এ প্রসঙ্গে জুনাইদ আহমেদ পলক এর আগে প্রযুক্তির সহায়তায় উপজেলা পর্যায়ে পাবনার ঈশ্বরদী, কুমিল্লার দেবীদার, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী, নাটোরের সিংড়াসহ ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জ জেলায় ত্রাণ বিতরণের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৮ হাজার সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছে গেছে। সন্ধ্যাতে আরো পরিবারে কাছে যাবে। প্রক্রিয়াটি চলমান। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই এবার প্রকৃত হতদরিদ্র পরিবারগুলো এই সহায়তা পাচ্ছে। কারণ প্রযুক্তি কোনো ত্রুটি গ্রহণ করে না। সংশ্লিষ্টরা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছে, আবার করণীক ভুলও রয়েছে। তবে দুই দিন আগে জেলা প্রশাসকদের তালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি ত্রাণ বিতরণে টাঙ্গাইল মডেল-এর কথা স্মরণ করে বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার সফলতার নজির আমাদের আছে।