অবরুদ্ধ শিবচরে আতঙ্ক, মানুষের চলাচল সীমিত

SHARE

করোনাভাইরাসের কারণে মাদারীপুরের শিবচরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। প্রশাসন থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা জানালেও শিবচরে নছিমন, করিমন, লেগুনা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র চলাচল করতে দেখা গেছে। আবার ওষুধ, কাঁচামাল, মুদিদোকান ছাড়াও জুয়েলারি, কসমেটিকস, পোশাকের দোকান, থান কাপড়ের দোকান খোলা রয়েছে। তবে জনসমাগম একদম কম।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা প্রশাসন, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক করছেন। তাঁদের দাবি, সাধারণ মানুষ সতর্কতার সঙ্গে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলছে।

এদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও পাঁচ্চর ও বহেরাতলা গ্রামের জনগণকে চলাচলে সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিবচর উপজেলার বাজারে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশে বেশ কিছু দোকান তালাবদ্ধ। হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ। তবে গার্মেন্ট ও কাপড়ের দোকান বেশির ভাগই খোলা। এসব দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা একদমই কম। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দোকান খুলে ক্রেতাশূন্য বসে আছেন। উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও নছিমন, করিমন, লেগুনা, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। কিছু যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতেও দেখা গেছে।

শিবচর গোলচত্বরে সিদ্দিকুর নামের এক ইজিবাইকের চালক বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয় তিনি গণমাধ্যমে দেখেছেন। তবে তাঁদের কেউ কিছু বলেনি। যাত্রী আসছে। তাই তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। ইজিবাইকে যাত্রী না নিলে তো আয়–রোজগার হবে না। না খেয়ে মরতে হবে।

শিবচর বাজারের খলিফাপট্টি মার্কেটের দোকানি লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমরা রাতে টিভিতে খবর দেখে সব দোকান বন্ধ রাখি। পরে সকালে আশপাশের দোকান খোলায় আমরাও দোকান খুলি। আর দোকান খুলেই বা কী? ক্রেতার দেখা নেই। সবাই দোকান খুলে বসে রয়েছেন, দু–একজন ক্রেতা আসে, তবে তারা কোনো প্রবাসী ক্রেতা বলে মনে হচ্ছে না।’

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে এক জরুরি সভায় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শিবচর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ও দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে বিদেশ থেকে আসা সব প্রবাসীকে কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকার সব মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়। উপজেলার গণপরিবহন বন্ধ এবং ওষুধ, কাঁচামাল ও মুদিদোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এরপর শুক্রবার সকাল থেকেই উপজেলাটি থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জনসমাগমও কম দেখা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলোতে খাদ্য মজুত করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ছয়জন শিবচরের বাসিন্দা রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটা সত্য যে কিছু প্রবাসী কথা শোনেন না। তাঁরা ইচ্ছেমতো চলাচল করেন। তবে আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা সব সময় প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করছেন।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে ৬৮৪ জন প্রবাসী শিবচরে এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে এ উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া চারটি এলাকাকে আমরা জনগণের চলাচলে সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে। আজ আমরা দেখেছি, উপজেলায় লোকজনের সমাগম কম। তারা প্রয়োজন ছাড়া এখন ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। এ ছাড়া বিয়ে, সমাবেশ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও তা খুব সীমিত।’