চট্টগ্রামের মেয়র ও ৫ আসনে মনোনয়ন যারা পেলেন

SHARE

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে এবারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর বদলে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে নৌকার মাঝি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে। গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়নও চূড়ান্ত করা হয়।

ঢাকা-১০ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাগেরহাট-১ আমিরুল আলম মিলন, যশোর-৬ শাহীন চাকলাদার, বগুড়া-১ সাইদারা মান্নান, গাইবান্ধা-৩ উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। এই আসনগুলোর উপনির্বাচনে এঁরা নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।

মনোনয়ন বোর্ডের সভার সূত্রগুলো কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে না পারা এবং নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় চসিকে মনোনয়ন পাননি বর্তমান মেয়র নাছির। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনীত করেন।

সূত্র মতে, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আ জ ম নাছির উন্নয়নমূলক কাজের চেয়ে বিতর্কিত কাজ করেছেন বেশি। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র—দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে গিয়ে দলের মধ্যে তীব্র কোন্দল সৃষ্টি করেছেন। ছাত্রলীগের এক নেতা হত্যাকাণ্ডে তাঁর অনুসারীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে দলের মধ্যে অভিযোগ আছে। বহুবার তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে অন্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার ক্ষেত্রে মেয়র নাছির ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নাছিরের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।

অন্যদিকে রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়। রেজাউল করিম একসময় চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি সেখানকার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ডের মাননীয় সদস্যরা মনে করেছেন চসিকে প্রার্থী পরিবর্তন দরকার। তাঁরা মনে করেন, পুরনো আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকার কারণে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চারটিতেই পুরনো নেতাদের মূল্যায়ন করেছে আওয়ামী লীগ। কেবল রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ধানমণ্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনে ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট-১ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিরুল ইসলাম মিলনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-৬ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদার যশোর উপজেলা পরিষদেরও চেয়ারম্যান। গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া উম্মে কুলসুম স্মৃতি বর্তমানে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর বগুড়া-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাইদারা মান্নান প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের স্ত্রী। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

চট্টগ্রাম থেকে কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আওয়ামী লীগের বর্তমান টানা তিন দফায় রাষ্ট্রক্ষমতার আমলে এবং তাঁর আগের মেয়াদেও রাজনীতিতে রেজাউলের অনেক জুনিয়রও সরকারের বিভিন্ন পদ ও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশ কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর মধ্যে টানা তিনবার চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হতে ফরম সংগ্রহ করেন। আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি দল ও সরকারে কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও দলীয় কর্মসূচি নিয়ে এলাকায় ছিলেন।

চসিকের মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগ থেকে রেজাউল করিম ছাড়াও মোট ১৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। অন্য ১৮ জন হচ্ছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, একই কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং তাঁর ছেলে মুজিবুর রহমান, বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, জাসদের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ও সাবেক নারী কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী, ইনসান আলী।