পালিয়েও বাঁচতে পারলেন না মায়া

SHARE

২০১৯ সালের শুরুর দিকে, মায়া পালিয়ে যান- তবে তিনি এজন্য বেশ খুশি ছিলেন। তিনি উত্তর পাকিস্তানের নওশেরা থেকে এসেছিলেন, যেখানে সমাজ অনেক রক্ষণশীল এবং ভিন্ন মানুষদের জন্য সহনশীলতা খুব কম। আর মায়া সেই রক্ষণশীলতা মেনে চলেননি। তিনি হিজড়া ছিলেন, অর্থাৎ তিনি পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নারী হিসাবে নিজের পরিচয় দেন এবং নারীদের মতো জীবনযাপন করেন।

তিনি নিজ বাড়িতে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ নিয়ে তিনবার পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিবার অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি নতুন একটি সম্প্রদায়ে নিজের সুখ খুঁজে পান তবে এরপর তিনি পেশাওয়ারে তার পরিবারের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ নেন।

তার শৈশবের বন্ধু মেহেক খান বলেন, ‘আমরা নিজেদের আরও ভালোভাবে চিনতে পারলে ভাল হতো।’ কারণ মায়ার পরিবার তাকে খুঁজে বের করে এবং তিনি পালিয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায় মারা যান।

পুলিশ সন্দেহ করেছে যে তার ভাই এবং চাচা তাকে হত্যা করেছে, তবে তারা জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ যে, পুলিশ এই মামলায় অনেক ফাঁকফোকর রেখে দিয়েছে, যার অর্থ মায়া হয়তো কখনোই ন্যায়বিচার পাবেন না, যেমনটা পাননি পাকিস্তানের খুন হওয়া বহু হিজড়া নারী।

‘আমরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি’
খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যে মায়ার বাড়িতে, হিজড়া নারীদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে – তারা নিজেদের প্রায়ই ‘শি-মেইল’ হিসেবেও উল্লেখ করে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের আদালতের একাধিক রায়ে তৃতীয় লিঙ্গকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন এখনও ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে।

দেশটিতে সামাজিকভাবে, এখনও হিজড়াদের নিম্নশ্রেণীর হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। গোপনীয়তা, ব্যক্তিগত মর্যাদা বা এমনকি নিজেদের সুরক্ষা দাবি করার কোনও অধিকার তাদের নেই।

মায়ার গল্পটি সেই বাস্তবতার অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছে। ‘আমরা প্রথম থেকেই একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম,’ মেহেক বলেন। ‘এটির একটা কারণ হতে পারে যে আমরা জানতাম, আমাদের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য একই ধরণের।’ মায়া ও মেহেক নওশেরা গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন। তাদের বাড়ির দূরত্ব রাস্তার এপার আর ওপার।

উভয়ই পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে তারা সবসময়ই নিজেদের নারী হিসেবে অনুভব করতেন, বলেন মেহেক। তিনি মাঝে মধ্যে মাথায় ওড়না জড়াতেন, নখে নেইলপলিশ লাগাতেন। মেহেকের বাবা এবং চাচা তাকে বাড়ির কলঙ্ক বলে মনে করেছিলেন।

‘তারা প্রায়শই আমাকে মারধর করত, আমাকে একটি ঘরে আটকে রাখত … তবে আমি নারীর মতো বেশ ধরা থামাতে পারিনি,’ মেহেক বলেন।

নারীদের মতো পোশাক পরার জন্য মায়াও তার পুরুষ আত্মীয়দের কাছ থেকে একই ধরণের আচরণের শিকার হয়েছিলেন। কৈশোর বয়সে পা রাখার সাথে সাথে এই বিষয়গুলি আরও কঠিন হয়ে ওঠে।

মেহেক বলেন, ‘এই সময়ে শি-মেইলরা অনুভব করতে শুরু করেন যে, মানুষ তাদেরকে যা ভাবে, আসলে তারা তেমন নয়। যখন এমনটা হয়, তখন পরিবারের সাথে জীবনযাপন করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে এবং আপনি বেরিয়ে আসার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেন।’

মায়া ও মেহেক দুজনই বাড়ি থেকে পালিয়ে নামকরা নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তারপর ২০১৬ সালে, মেহেক অবশেষে এটি করতে পেরেছিলেন। তিনি পেশাওয়ারে পালিয়ে যান, সেখানে তার একজন প্রেমিক তাকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ খুঁজে দেন।

মায়ার সাথে মেহেকের সবশেষ কথা হয়েছিল এক বছর আগে। মেহেককে, মায়া বলেছিল যে সেও পালানোর পরিকল্পনা করছে। ‘আমি খুশিতে কেঁদেছিলাম,’ মেহেক বলেন। পরে মায়া ও মেহেক একসাথে পাঞ্জাব প্রদেশের উত্তরাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা কামরায় একজন গুরুর কাছে আশ্রয় নেন।

সমাজের বেঁধে দেয়া নিয়মের চাপে পড়ে, পাকিস্তানের হিজড়া নারীরা সাধারণত ছোট একটি সম্প্রদায় হিসেবে জোট বাঁধেন। হিজড়া নারীদের উপার্জন করা অর্থের একটি অংশের বিনিময়ে প্রবীণ হিজড়া নারীরা সেখানে গুরু হিসাবে, সম্প্রদায়ের অভিভাবক এবং সুরক্ষকর্তা হিসাবে কাজ করেন।

গুরু তাদের শিখিয়ে দেন কীভাবে পোশাক পরতে হবে এবং কিভাবে পারফর্ম করতে হবে। যেন তারা, হিজড়াদের জন্য নির্ধারিত হাতে গোনা কয়েকটি উৎস থেকে যেমন বিয়ে বাড়িতে নাচ দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

বিশ্বাসঘাতকতা করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া
সে বছর দু’জনই তাদের নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সময় ব্যয় করেন। মেহেক বলেন, ‘ওই বছরটি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ বছর ছিল’।

পাকিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করার একটি সস্তা বিকল্প হল হিজড়া নাচ। এছাড়া বিয়ে বাড়িতে হিজড়াদের আমন্ত্রণ জানানোর আরেকটি কারণ হল, বিয়েতে তাদের ডাকলে ওই সম্প্রদায়ের প্রবীণদের তিরস্কার থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর হিজড়াদের জন্য এই নাচ হল, ভিক্ষা করা বা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করা এড়ানোর একটি উপায়।

‘আমরা পুরো পেশাওয়ারের প্রায় সবখানে গিয়েছিলাম, বিয়েতে এবং অন্যান্য পার্টিতে নেচেছি, এবং আগের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেছি।’

তবে এই সুখের সময়টা ছিল অনেক ছোট – তাদের দুজনই শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেমিকদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন। দুজনের প্রেমিক ফন্দি করে তাদের খবর যার যার পরিবারের কাছে জানিয়ে দেয়। পরে তাদের দুজনকেই বাসায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনের চুল কেটে দেয়া হয় এবং নির্যাতন করা হয়।

মেহেক বলেন, মায়াকে ভয়াবহ মারধর করা হয়েছিল, এবং তার ভাই তাকে বেশ কয়েক দিন ধরে বাড়ির বেজমেন্টে একটি বিছানায় বেঁধে রেখেছিল।

অব্যাহত নির্যাতনের মুখে মার্চ মাসে, তারা দুজনেই আবারও পালিয়ে যান, শেষ পর্যন্ত পেশাওয়ারে এসে পৌঁছান, যেখানে টমি নর্তকীর প্রচলন রয়েছে।

টমি নর্তকী বলতে হিজরাদের নাচই বোঝায়, তবে এখানে হিজরাদের সাজসজ্জায় নারীর বেশ কম থাকে। এর অর্থ ন্যাড়া মাথা সত্ত্বেও তারা বিয়ের কাজ পাবে।

সেখানে নায়না খান হয়ে গেলেন তাদের নতুন গুরু। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে মায়া কীভাবে পেশাওয়ারে বেশ ভালভাবে টিকে গিয়েছিলেন। ‘মায়া বেশ স্বচ্ছন্দ্য, সাহসী এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন,’ তিনি বলেন।

কিন্তু তারপরে এক শনিবার, ‘ডোরবেল বেজে ওঠে এবং মায়ার পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি হাতে একটি ফোন নিয়ে আসেন। তিনি নয় রুমের ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসেন। যেখানে প্রায় ২০জন শিষ্যকে জায়গা দেয়া হয়েছে।’

মায়া সামনের ঘরের একটি খাটে হেলান দিয়ে ফোনে কথা বলছিল। ওই ব্যক্তি অন্য খাটে বসেছিলেন এবং তার ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মাঝে মাঝে মায়ার দিকেও এক ঝলক তাকাচ্ছিলেন।

নায়না বলছেন, ‘এখন আমার সন্দেহ হয় ওই ব্যক্তির ফোনে নিশ্চয়ই মায়ার ছবি ছিল এবং তিনি মায়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।’

এরপর ওই ব্যক্তি হঠাৎ চলে যান। এর কয়েক মিনিট পরে আবার দরজায় ঘণ্টা বাজে, এবং তিন জন ঘরের ভেতরে ঢোকে।

‘আমি দেখলাম মায়া তাড়হুড়ো করে ঘরে ঢুকেই তার কানের দুল এবং নাকফুল খোলে আর মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়, সবকিছু একটি পার্সে রেখে আমার হাতে দেয় সে। খুব ভয় পেয়েছিল মায়া। আমাকে সে জানায় যে তার ভাই এবং চাচা তাকে নিতে এসেছেন।’

এরপর লম্বা গড়নের এক যুবক ঘরে ঢুকে মায়াকে পেটায়। নায়না ও তার শিষ্যরা সাথে সাথে ঘরে ঢোকে। ওই লোকটি একটি বন্দুক বের করলেও ভয় পায়নি বলে জানান নায়না। পরে সবার সহায়তায় তারা ওই তিনজন ব্যক্তিকে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের করে দিতে সক্ষম হন।

কিন্তু আধ-ঘণ্টার মধ্যে একটি একদল পুলিশ হাজির হয় এবং পুলিশ কর্মকর্তা মায়াকে তার সাথে যাওয়ার আদেশ দেন। নায়না হস্তক্ষেপ করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন যে, মায়া তার নিজের বাড়ি থেকে সোনা চুরি করেছে।

কোনও উপায় না পেয়ে নায়না ও তার শিষ্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা মায়ার সাথে থানায় যাবে। পরের কয়েক ঘণ্টা ধরে, তাদের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়।

মায়া যেহেতু নিজে থেকে বাড়ি যেতে চাচ্ছে না তারপরও তাকে কেন থানায় আনা হয়েছে, সে নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। মায়া প্রাপ্তবয়স্ক এবং সে যেটা চায় না, তাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করা যাবে না।

এরপর থানার প্রধান তাকে আশ্বাস দেন যে তারা কেবল মায়াকে তার বাবার সাথে কথা বলিয়ে দিতে চান, যিনি নওশেরা থেকে এই পেশাওয়ারের পথে রয়েছেন। তারপরে মায়া তার যেখানে যেতে ইচ্ছা করে সেখানে যেতে পারবে।

নায়না ও তার শিষ্যরা এরপর একটি বিয়ে বাড়ির কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তু তারা যখন ফিরে আসেন তখন মায়াকে আর থানায় দেখতে পান না।

যে আইন খুনিদের রেহাই দিতে পারে
সেই রাতে মায়ার সাথে কী হয়েছিল তা পরিষ্কার নয়, এবং কখনই হয়তো তা জানা যাবে না। পেশাওয়ার শহরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জহুর আফ্রিদি বিবিসিকে বলেন যে, মায়া নিজের ইচ্ছায় তার বাবা, চাচা এবং অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দের সাথে চলে যায়।

তবে হাস্টনাগরী পুলিশের একটি গোপন সূত্র বিবিসিকে সাদা কাগজে লেখা একটি অনুমতিপত্র দেখায়, যেখানে শুধু মায়ার বাবা এবং চাচা স্বাক্ষর করেছিলেন, মায়ার কোনো স্বাক্ষর ছিল না।

নওশেরা পুলিশের তদন্তে প্রমাণ হয় যে মায়াকে যে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটা তার চাচার মালিকানাধীন একটি পেট্রোল স্টেশনে কিছু সময়ের জন্য থামে।

সেখান থেকে মায়া আরেকটি গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে তার চাচা এবং ভাই ছিলেন। এরপর পরিবারের বাকী সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়।

পরদিন সকালে মায়াকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, নওশেরার কাছে একটি জঙ্গলে রক্তাক্ত অবস্থায় মায়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় মায়ার বাবা, তার ভাই, চাচা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে বিবৃতিতে তারা সবাই মায়াকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাদের সবাইকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।

হিজড়া অধিকার কর্মী তৈমুর কামাল বলেন, এই মামলায় যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। তবে পুলিশ ‘এই মামলায় কিছু প্রাসঙ্গিক ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে না, যেটা অপরাধীদের শাস্তি এড়ানো কঠিন করে তুলতো।’

পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে, একটি প্রাচীন আরবদেশের রীতি প্রচলিত রয়েছে। যেখানে খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবার, অর্থের বিনিময়ে খুনি ব্যক্তিকে ক্ষমা করার অধিকার রাখে। সেই অর্থকে ব্লাড মানি বলা হয়।

তবে ২০১৬ সালে তথাকথিত সম্মানের জন্য হত্যাকাণ্ড বা অনার কিলিং রোধে – এবং খুনি পরিবারগুলোকে অর্থের বিনিময়ে হত্যার দায় থেকে পালানো ঠেকাতে- পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সম্মান রক্ষার নামে অপরাধ করার অধিকার বাতিল করেছে।

‘মায়া পরিষ্কারভাবে এই অনার কিলিং এর শিকার ছিলেন।’ তৈমুর কামাল বলেন, ‘তবে পুলিশ এই মামলায় সম্মানের এই ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করেনি, এর ফলে মায়ার মা বা বোন যেন খুনিদের ক্ষমা করতে পারে সেই সুযোগ রেখে দিয়েছে।’ এই সম্মান অপরাধ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ সকল ক্ষেত্রে এই অধিকার বাতিল করে দিয়েছে।

যার মরদেহ কেউ দাবি করেনি তবে অর্থ দিয়েছে
পেশাওয়ার ভিত্তিক ট্রান্সজেন্ডার রাইটস গ্রুপ ট্রানজেকশন বলছে যে ২০১৫ সাল থেকে শুধুমাত্র খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ৭০জন হিজড়া নারীকে হত্যা করা হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে সংস্থাটি এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে পেশাওয়ারে নাজো নামে এক হিজড়া নারীর হত্যার খবরটিও সামনে আসে।

গত বছর জুলাইয়ে দুই বন্ধু তাকে হত্যা করে এবং তার দেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভর্তি করে। তবে সেই ব্যাগ ফেলে দিতে যাওয়ার সময় তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়।

নাজোর পরিবার তাদের মর্যাদাহানি হওয়ার ভয়ে তার মরদেহ গ্রহণ করেনি। পরে পেশাওয়ারে পুলিশের কবরস্থানে নাজোর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দাফন করা হয়।

তবে আদালতে যখন মামলা দায়ের করা হয় এবং খুনিরা যখন নাজোর পরিবারের কাছে ব্লাড মানি বা অর্থের বিনিময়ে ক্ষমা চাইতে আসে। তখন তারা ঠিকই নাজোকে নিজেদের বলে দাবি করেন। দুমাস আগে তাদের ক্ষমার কারণে নাজোর হত্যায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি খালাস পান।

সাম্প্রতিককালে, মারদানের এক হিজড়া নারীকে তার পরিবার হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। মানবাধিকারকর্মীরা তার মৃতদেহের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলেও কেউ পুলিশের কাছে কোনো হত্যা মামলা দায়ের করেনি, বা পুলিশও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো চেষ্টা করেনি।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, বেশিরভাগ সময় প্রেমিকরা রাগের বশে এই ধরণের হত্যা করে থাকে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হত্যার ঘটনা বিরল, কারণ বেশিরভাগ হিজড়া নারীরা অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

এই হিজড়া নারীদের ‘আত্মীয়’ বলতে তারা যেখানে বাস করেন সেই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বোঝায়। এবং যখন তারা চলে যায়, এই সম্প্রদায়ের মানুষই সবচেয়ে বেশি তাদের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়।

মায়ার প্রাক্তন গুরু নায়না বলেন যে, তিনি যতবার তার সিন্দুক খোলেন, ততবার তার মায়াকে মনে পড়ে। ‘আমি তার পার্সটি দেখি, এবং কাঁদি। তার সবই সেখানে আছে; কিছু টাকা, তার ফোন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার গহনা। সে অনেক কম বয়সী ছিল। আপনি এই বয়সী কারও দিকে তাকিয়ে তার মৃত্যুর কথা ভাবতে পারবেন না।’

মেহেকের কাছে মায়ার স্মৃতি আরও গভীরভাবে গেঁথে আছে। ‘নায়না দয়াবান এবং আমাদের নিরাপত্তা দেন এবং আমাদের এই জায়গাটি বন্ধুত্বপূর্ণ শি-মেইলদের কথায় আর হাসিতে মুখরিত থাকতো। তবে আমার হৃদয় বেদনা অব্যাহত রয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে হারিয়েছি এবং কেউই তার স্থান নিতে পারবে না,’ তিনি বলেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন