বুলবুলের প্রভাবে বাড়তে পারে ডেঙ্গু প্রকোপ

SHARE

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলায় অশনি সঙ্কেত দেখছে কলকাতা পৌরসভা। মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কলকাতায় কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল কলকাতা পৌর দপ্তর। তবে, তেমন কিছুই ঘটেনি, ঝড় সরে গেছে বাংলাদেশের দিকে। রোদের মুখ দেখেছে কলকাতা, কেটেছে দুর্যোগও। কিন্তু, এই বুলবুলের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর ছোবল আরো জোরালো হবে বলে মনে করছেন পৌর কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলায় কপালে ভাঁজ পড়েছে রাজ্য সরকারের।

গত ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৩। শনিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের নেতৃত্বে পর্যালোচনা বৈঠকের পরে রাজ্য সরকার জানায়, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪,৮৫২ জন। ডেঙ্গুর এই প্রকোপ ঘিরেই একটি বৈঠক ডাকা হয়। এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব সংঘমিত্রা ঘোষ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তীসহ কলকাতা পৌরসভা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার প্রতিনিধিরা।

গত এক সপ্তাহে কলকাতা পৌর এলাকা, হাওড়া গ্রামীণ এবং হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ উত্তরোত্তর বেড়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তার বলেন, ‘নতুন করে তিনটি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়েছে। ফলে উদ্বেগে রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ওই তিন এলাকা ছাড়াও সর্বত্র সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার পর্ণশ্রী, ধাপা, পিকনিক গার্ডেন, তিলজলা প্রভৃতি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর চৌবেরিয়া ১, ২, নৈহাটি পৌরসভার অন্তর্গত গরিফা, হাজিনগরে এবং খড়দহের রহড়ায় বিশেষ নজর রেখেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। হুগলির ডেঙ্গু উদ্বেগের কারণ হলো রিষড়া পৌরসভা। হাওড়ার ডোমজুড় ব্লক এবং বাঁকড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

এই পরিস্থিতিতে বৈঠকে জোর দিতে বলা হয়েছে মশার লার্ভা নিধন, জঞ্জাল সাফাই, বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের ওপরে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে মগরাহাট ১, ২ এবং মথুরাপুর ১, ২ নম্বর ব্লকে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পৌরসভাগুলোর পরিষেবার গতিও বাড়ানোর নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব।

আগামী বছরের জন্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে কীভাবে প্রস্তুত থাকা যায়, তার একটি নীল-নকশা চান মুখ্যসচিব। নভেম্বরেও যেভাবে একের পর একের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। এক কর্মকর্তার কথায়, ‘প্রায় প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার পরে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পর প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়। এই পরিস্থিতিরই বদল চাইছে রাজ্য।’

পরিস্থিতির বদল চেয়ে এ দিন উন্নয়ন ভবনের পক্ষ থেকে কেএমডিএ’র আবাসনগুলি নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান নিয়ে কলকাতা পৌরসভা ও কেএমডিএ’র মধ্যে চাপান-উতোর এর আগেও ঘটেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কেএমডিএর নিজস্ব আবাসন ও বাজার পরিষ্কার করে না। অন্যদিকে, কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল পৌরসভার যে পরিকাঠামো রয়েছে তা তাঁদের নেই।

রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেএমডিএ-কে তাদের আবাসন পরিষ্কার রাখতে হবে। পৌরসভা আবাসনের বাইরে কাজ করে। শুধু কেএমডিএ-ই নয়, অন্য দপ্তরগুলোও যাতে তাদের বাড়ির ভেতর পরিষ্কার রাখে সেই বিষয়েও আমি নির্দেশ দিয়েছি।’