‘তাঁরা অনেক বড় ব্যবসায়ী, তাঁদের ধরা উচিত, আমরা তো চুনোপুঁটি’

SHARE

বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানো অব্যাহত রেখেছেন। সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি থাকায় এর অপব্যবহার করছেন সুযোগসন্ধানী কিছু ব্যবসায়ী। বলা চলে, যেন প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়িয়ে চলেছেন তাঁরা। এ অভিযোগ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যাবের পক্ষ থেকেও। অন্যদিকে বাজারে নেই সরকারের কার্যকর নজরদারি। সরকারি সংস্থা টিসিবির খোলাবাজার পদক্ষেপও কমাতে পারছে না পেঁয়াজের উত্তাপ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি পেঁয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত, যা এক দিন আগেও ছিল ১১০ টাকা। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি বা আমদানি—সব ধরনের পেঁয়াজের দামেই ঊর্ধ্বগতি। গত এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ১২০ টাকায় উঠল পেঁয়াজের দাম।

এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাজারে যাঁরা প্রভাব বিস্তার করছেন, তাঁরা অনেক বড় ব্যবসায়ী। তাঁদের ধরা উচিত। আমরা তো চুনোপুঁটি। দাম কমা বা বাড়াটা তাঁদের ওপরই নির্ভর করে।’

পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে আড়তের বিক্রেতা লোকমান হোসেন দাবি করে বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজের মজুদও কম। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বাড়তি।’

শ্যামবাজারের আমদানিকারকরা বলছেন, আগে দিনে ভারত থেকে সাড়ে ছয় হাজার টন পেঁয়াজ আসত। এখন সেখানে মিয়ানমার থেকে দিনে ২৫০-৩০০ টন পেঁয়াজ আসছে। অন্যান্য দেশ থেকে আরো কিছু পেঁয়াজ আসছে। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়।

টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ জানায়, গেল ২৬ দিনে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানির এ হার আগের চেয়ে বাড়ছে।

পেঁয়াজের আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যত কথাই বলি, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম কমবে না। কারণ আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাচ্ছি না। আবার আমদানিও করতে হচ্ছে চড়া দামে।’

তবে এই বিক্রেতা স্বীকার করলেন, বাজারে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন—মিসরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ৮০-৮২ টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন। সেটা খুচরা বাজারে ৯০ টাকা থাকার কথা। তবে এ পেঁয়াজও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আড়তে। সেটা খুচরায় ১০০-১০৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটিও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্থিরতার বাজারে এ সুবিধা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন বলে কালের কণ্ঠ’র কাছে স্বীকার করেছেন হাজি মো. মাজেদ।

ভোক্তাদের দাবি, বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। কারণ বাজারে গেলে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা যায় না। দাম যখন বেড়ে যায় তখনই সব দোকানদার একসঙ্গে বাড়ায়। এটা সম্ভব তখনই, যখন বিক্রেতারা একজোট থাকে।

গুলশান গুদারাঘাটে বাজার করার সময় বিক্রেতা হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব ব্যবসায়ীই এখন একজোট হয়ে ফায়দা তুলছেন। দাম বাড়ার গন্ধ পেলেও তাঁরা সবাই একসঙ্গে, সমান হারে দাম বাড়িয়ে দেন।’

আরেক ক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাজারে সরকারের নজরদারি নেই বললেই চলে। নজরদারি হলে অন্তত দিনে দিনে দাম বাড়তে পারে না।’

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলাবাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। কিন্তু তাতেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। প্রতিষ্ঠানটি এখন ঢাকার ৩৫টি স্থানে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন এক হাজার কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানান টিসিবির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।