ঢাকায় আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করলেন মিন্নি

SHARE

ঢাকায় এসেছেন বহুল আলোচিত বরগুনায় প্রকাশ্য হামলায় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার কক্ষে যান মিন্নি।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানান, মিন্নি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেডআই খান পান্নার কক্ষে এসেছি।

মিন্নির আইনজীবীরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে আইনি পরামর্শের জন্যই মূলত মিন্নিকে ঢাকায় এনেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে এমভি শাহরুখ লঞ্চে বাবার সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন মিন্নি।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার মধ্যে ২ জুলাই এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা রিফাতকে ফেলে চলে যায়। এরপর ওই দিন বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়। পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ কেটেছেঁটে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একটি পক্ষ মিন্নির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। এরপর ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ লাইনসে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সেদিন রাতে তাঁকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। কিন্তু মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী সেদিন আদালতে দাঁড়াননি, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিন্নি বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ।

মিন্নির আইনজীবীরা গত ২১ জুলাই বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। মিন্নিকে ওই দিন আদালতে হাজির করার আবেদন করা হলেও সে আবেদনও খারিজ করে দেন আদালত। এরপর ৩০ জুলাই বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়। এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়। তবে ৮ আগস্ট শুনানির পর জামিন আবেদন খারিজ করে দিলে মিন্নির আইনজীবীরা আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

এরপর আবার হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ গত ২০ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন রাখেন। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার আদেশ দেন। আদালত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের ওই রায় স্থগিতের জন্য রবিবার আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। একই দিন বরগুনার পুলিশ মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মিন্নির জামিন স্থগিতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যে আবেদন করেছিল, সোমবার তার ওপর শুনানি হয়। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন অর্থাৎ মিন্নির জামিন বহাল রাখেন।

প্রায় দেড় মাসের মাথায় বাবার জিম্মায় জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরেন মিন্নি।