নাটকে সংলাপ এমন হওয়া উচিৎ নয়, শুনে বাবা-মা পাশ থেকে উঠে যায়

SHARE

নাটকের যে ফ্লো ছিল তা কমে গেছে কি না- এমনটা মনে করেন না মোশাররফ করিম। তবে নতুন ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ রয়েছে বলে জানালেন তিনি। কোন ধরনের কাজ করে তৃপ্তি? প্রশ্নটিকে লিমিটেড হিসেবে আখ্যায়িত করে বললেন, ‘একজন অভিনেতা সব চেটেপুটে খেতে খাবে, আমি তাই চাই। একজন অভিনেতার যে কোনো চরিত্রই চাওয়া হওয়া উচিত কিন্তু আমাদের এখানে, শুধু এখানে বললে ভুল হবে গোটা উপমহাদেশে; শুধু কলকাতা হিসেবে করলেই হবে একই দেখা যায়- একটা কিছু হিট হলো এরপর সেরকমই একই জিনিস চলতে থাকলো। কেন চলতে থাকলো?’

নিজেই প্রশ্ন করে উত্তর দিলেন মোশাররফ করিম নিজেই। বললেন, ‘আসলে কেন মাথা খাটাবো? অমুকে এই জিনিসটা বানিয়েছে এবং সেটা হিট হয়ে গেছে সেটা অনুকরণ করলেই। তাতে হয় কি যারা সৃজনশীল মানুষ না, তাতেই তাদের হয়ে যায়। রোজগার হয়। আর কোনো ঝামেলা নেই। আর আমরা যারা দাবি করতে চাই যে আমরা সৃষ্টিশীল বা সৃষ্টিশীলতার মধ্যে ঢুকতে চাই, সৃষ্টিশীলতা আমাদের আনন্দ দেয়। তখন আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। আমরা যেহেতু নাটক বা সিনেমা বানাই না, সেরকম জিনিস আমাদের কাছে আসতে হবে।’

মোশাররফ করিমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টঙ্গীর একটি বস্তিতে। সেখানেই তিনি কথা বললেন প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে। জানালেন মুরসালিন শুভ’র পরিচালনায় ‘রাজন : দ্য কিং’ নামের একটি নাটকের শুটিং এর জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। নাটকের গল্প লিখেছেন অপূর্ণ রুবেল। মোশাররফ করিম জানালেন, নতুন নতুন কাজের অংশ হিসেবেই তিনি এই ‘যন্ত্রণাদায়ক’ স্থানেও শুটিং করতে এসেছেন। টঙ্গীর আন্ডারওয়ার্ল্ডেকেন্দ্রিক গল্প আবর্তিত হয়েছে ক্যামেরায়।

সাম্প্রতিক সময় হিট ইস্যুতে কথা বলেন সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, ‘মূল বন্ধ্যাত্বের জায়গা হিট। একটা হিট হলেই সেখানে সবাই আটকে যায়। যার ফলে নতুন সৃজনশীলতার বিকাশে তৈরি হয় বন্ধ্যাত্ব। অভিনেতা সেখানে অসহায় হয়ে যায়। পরিচালক গল্প দেয়, অভিনয়শিল্পী কাজ করে। তাকে কাজ করতে হবে। এই দায়বদ্ধতা সকলের। চ্যানেলগুলোরও। নতুন কাজ, নতুন ধরনের কাজ; সেটাকে পেট্রোনাইজ করা। চ্যানেলও যদি মনে করে এমন কাজ অনন্তকাল ধরে চলতে থাক, তাহলে তো সৃষ্টিশীলতা থাকছে না।’

নিজের চরিত্রগুলো বেশি হয়ে যাচ্ছে। বা বাহুল্যতা আসছে কি না- সর্বোপরী নিজের আত্মসমালোচনা- কীভাবে করবেন? মোশাররফ করিম খুব সচেতনভাবে এই ইয়র্কার খেললেন। বললেন, ‘আমরা বরাবরই একটা জায়গায় আটকে থাকতে পছন্দ করি। কথায় কথায় ন্যাচারাল অভিনয়, রিয়েলিস্টিক অভিনয় বলি- দিস ইজ দ্য নট অনলি ফর্ম অ্যাকচুয়ালি… সেখানে অনেক ফর্ম আছে। বিভিন্ন ধরনের ফর্ম আছে। কিন্তু সেটা যখন একটা ডিজাইনের আওতায় আসবে তখন সেটাকে শিল্পভুক্ত করা যাবে। একটা নাটক বানাবো সেখানে সবগুলো চরিত্র লাফিয়ে লাফিয়ে কথা বলবে, আই ডোন্ট মাইন্ড। যখন সেট ডিজাইন কস্টিউম সকলের অভিনয় মিলে সমন্বয় করা হয় তখন আর খাপছাড়া লাগে না। কিন্তু এই সমন্বয়টা না হলে একঘেয়ে বিষয় চলে আসে। বাহুল্য কথাটা তখনই বাহুল্য যখন ডিজাইনের বাইরে হয়ে যায় বিষয়টা।’

নাটকের বাজে সংলাপ, ইঙ্গিতপূর্ণ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড সংলাপ বেড়েই চলেছে- বিষয়টি নিয়েও নিজের অভিমত জানালেন, ‘শিল্প সচেতনতা, সমাজ সচেতনতা পরিবারের সকলের সঙ্গে ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে গিয়ে- যেহেতু টেলিভিশন, এখানে এমন কোনো কিছুই হওয়া উচিত না। যাতে আমার বাবা আমার পাশ থেকে উঠে চলে যায়। কখনো কখনো কোনো গল্পের ধরনে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় বাজে শব্দ ব্যবহারের। যদি ধ্বংস হয়ে যাওয়া, ব্রোকেন তরুণ সমাজের গল্প বলি- তাহলে হয়তো অপরিহার্য হয়ে যায়- কিন্তু দুটো ইউনিভার্সিটির ছেলে হঠাৎ করে কথা বলতে গিয়ে গালি দিয়ে দিয়ে বসল- এটা অপরিহার্য নয়।