বদর-ওহুদ যুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, তোপের মুখে ইমরান খান

SHARE

‘বদরযুদ্ধে রাসূলের (সা.) সঙ্গে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী অংশ নেন। অন্য সাহাবীরা ভয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেননি। আর ওহুদ যুদ্ধে সাহাবারা রাসূলের (সা). আদেশ সত্বেও পাহারার স্থান থেকে সরে যান। এ কারণে ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয় নেমে এসেছিল।’

ইসলামের প্রথম দুই যুদ্ধ নিয়ে এমন মন্তব্য করায় পাকিস্তানজুড়ে ইমরান খানের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় আলেমরা ইমরানের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের নিয়ে ‘ভুল’ বক্তব্য দেয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ট্রলের স্বীকার হচ্ছেন ইমরান।

ইমরান খানের সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনীতিবীদদের গ্রেপ্তার চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ আগে থেকেই কারাগারে আটক রয়েছেন।

সোমবার সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে গ্রেপ্তারের পরই মঙ্গলবার মুসলিম লীগের (নওয়াজ) শীর্ষ নেতা হামযাহ শরীফকে আটক করা হয়। বিরোধী রাজনীতিবীদদের এমন গ্রেপ্তার দেশটির প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

বাজেট অধিবেশন চলাকালে এ নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে তুমুল হট্টগোল ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে গত মঙ্গলবার। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত ১১টার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক অবনতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে ইমরান খান দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন ওই ভাষণে। জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানের জাতীয় চোরদের কোনো প্রকার ছাড় না দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারকা ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া এ রাজনীতিবীদ।

ওই ভাষণেই কথা প্রসঙ্গে বদর ও ওহুদ যুদ্ধের আলোচনা করেন ইমরান।

এতে তিনি দেশব্যাপী সমালোচিত হচ্ছেন। এবং পড়েছেন দেশের আলেম সমাজের তোপের মুখেও। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ট্রলের স্বীকার হচ্ছেন ইমরান।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যে ভুল রয়েছে জানিয়ে পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম মুফতি তাকি উসমানী একটি টুইট করেছেন। টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘বদর যুদ্ধে রাসুলের (সা.) সঙ্গে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবি অংশ নেন। অন্য সাহাবিরা ভয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেননি।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচায়ক।

হযরত কাব (রা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, খুব দ্রুত কাফেরদের কাফেলাকে ধাওয়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ জন্য অনেক সাহাবি বদর যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। এটিকে ভয় বা কাপুরুষতা বলা খুবই অন্যায় ও জুলুম।

ওহুদ যুদ্ধ নিয়েও আলাদা টুইট করেন মুফতি তাকি উসমানী। বিশ্বখ্যাত এ আলেম বলেন, ওহুদ যুদ্ধে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সাহাবাদের সরে যাওয়ার বিষয়টি একটি পর্যালোচনামূলক সিদ্ধান্ত ছিল।

ওই সাহাবিরা মনে করেছিলেন শত্রুরা সরে গেছে এবং যুদ্ধও শেষ হয়ে গেছে। তাই তারা ওই স্থান থেকে সরে যান। এটিকে জেনেশুনে অবাধ্যতা বলা যায় না। এ ভুলের জন্য তাদের নাফরমান বলা এবং তাদের শানে লুটতরাজের শব্দ ব্যবহার করা চরম বেয়াদবি।

পাকিস্তানের মিডিয়ার পরিচিত মুখ, করাচির জামিয়াতুর রশিদের অধ্যাপক সাইয়েদ আদনান কাকাখালী বলেন, সিরাত ও ইতিহাস বিষয়ে ইমরান খানের জানাশোনা খুবই কম। এমন বিষয়ে সঠিক তথ্য না জেনে তার উদাহরণ ও মতামত দেয়াটা খুবই আপত্তিকর হয়েছে। এ বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো উচিত।

বদর ও ওহুদ বিষয়ে তার বক্তব্য, রাসুল (সা.) ও সাহাবাদের মোবারক জামাতের ব্যাপারে তার বেপয়োরা মন্তব্য ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত।

ইমরান খানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের আরেক আলেম ও কলামিস্ট মাওলানা যাহেদ রাশেদী বলেছেন, ইমরান খান ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে খুবই কম জানেন। সাহাবা-এ-কেরাম ও বদর-ওহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে তার বক্তব্য সেই কথারই প্রমাণ বহন করে। পাশ্চাত্য ইতিহাসের সূত্রে তার বক্তব্যে এমন ভুল হয়েছে বলে জানান রাশেদী।

এ ছাড়া পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব আলেমই ইমরান খানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।