যা বললেন ইসরায়েলি সেনাকে চড় মেরে বিখ্যাত সেই তরুণী

SHARE

ইসরাইলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদের ভেতর বেড়ে উঠেছেন ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আয়েদ তামিমি। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন এই তরুণী। এরপর কেটে গেছে এক দশক। এখন আর তিনি ইসরাইলের কোনও যুক্তি বা বিচারে বিশ্বাস করেন না, ভয় পান না মৃত্যুকে।

তামিমির বয়স এখন ১৮ বছর। এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। রাশিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল আরটি-কে তামিমি বলেন, তিনি মনে করেন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর মতো তরুণ-তরুণীরাই ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ। বিশ্বব্যাপী তাঁর খ্যাতি দেশটির আন্দোলন সংগ্রামে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তাঁকে অনুসরণ করে মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হবে।

তামিমি বলেন, ‘পৃথিবীতে কোনও দখলদারিত্বই চিরস্থায়ী নয়। আমাদের অনেক শিশু ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী অনেক তরুণ-তরুণী শহীদ হয়েছেন। তাঁদের পথ অনুসরণ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মও তাঁদের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেবে।’

জীবনভর এই সংগ্রামী তরুণী ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাত সমাধানে যে কোনও আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তার পরিবার ইসরায়েলি সেনাদের অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাঁর বয়স যখন তিন বছর তখনই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর বাবাকে। এরপর থেকে তাঁর বাবা জেলে গেছেন আর বেরিয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠেছেন তামিমি।

২০১৭ সালের শেষ দিকের ঘটনা। তামিমির বাড়ির উঠোনে ঢুকে পড়ে দুই ইসরায়েলি সেনা। তামিমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওই দুই সেনাকে উঠোনের বাইরে যেতে বলেন। তামিমির কথায় তারা গুরুত্ব না দিলে এক সেনার গালে চড় বসিয়ে দেন এই ফিলিস্তিনি তরণী। এ ছাড়া মিছিলে বাধা দেওয়ার সময় ধস্তাধস্তির সময় ইসরায়েলি সেনার মুখে চড় দেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তাঁরা। তামিমির এসব সাহসী ভূমিকায় বিশ্বব্যাপী নাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর।

এই ফিলিস্তিনি আইকন বলেন, আটকের পর তাঁকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত ছয়বার গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর মাকে। গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনে তাঁর মা পায়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। দুই বছর ধরে তিনি হাঁটতে পারেননি। তাঁর চাচি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি সেনার হাতে। সুতরাং, এসব ঘটনায় এখন ভয় পান না তিনি।

তামিমি বলেন, ‘আট বছর বয়সে আমি প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। ওই সময় আমি বেশ ভয়ও পেয়েছিলাম। কিন্তু এরপর বহুবার প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি, ধীরে ধীরে আমার সেই শৈশবের ভয় কাটিয়ে উঠেছি।’ এখন তিনি আর নিজেদের ইসরায়েলি আগ্রাসনের ‘শিকার’ বাক্যটি ব্যবহার করতে চান না। বরং নিজেকে একজন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবেই পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্তির একমাত্র উপায় হলো গণপ্রতিরোধ। এর মধ্য দিয়েই কেবল মুক্তি অর্জন সম্ভব।