দেশি আমেজে বেশি রান

SHARE

বাংলাদেশের কোনো মাঠ নয়, তাতে কী! ‘ফিল হোমে’র সব ব্যবস্থাই তো আজ আছে দ্য ওভালে। দর্শক সংখ্যায় বড় ব্যবধানে বাংলাদেশের কাছে হেরে বসে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা! এমনকি প্রেসবক্সেও! ওভালের প্রেসবক্স আজ ‘ওভার ফ্লো’, সেটি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কল্যাণেই। ‘ঘরের অনুভূতি’ পেয়ে সাকিব-মুশফিক এগিয়েছিলেন দারুণভাবে। দুজনের দেখানো পথ ধরে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক ঝড় তুলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ৩৩০ রানের স্কোর। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ এল বিশ্বকাপের শুরুতেই!

শুরুতেই শর্ট বলে ভড়কে দিতে হবে আর ইনিংসের মাঝে নিয়মিত ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে চাপে রাখার কাজটা করবেন ইমরান তাহির—বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার এই তো কৌশল। সে কৌশলে তারা পুরোপুরি সফল না হতে পারলেও কিছুটা তো কাজে লাগিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ যেভাবে শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কৌশল পুরোটাই ব্যর্থ হতে পারত।

পাওয়ার প্লে দারুণ কাজে লাগিয়েছেন তামিম-সৌম্য, দুজন ওপেনিং জুটিতে এনে দিয়েছেন ৫০ বলে ৬০ রান। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে লুঙ্গি এনগিডির বলে স্লিপে কোনোভাবে বেঁচে যাওয়া সৌম্য এগোচ্ছিলেন ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে। প্রোটিয়াদের শর্ট বলগুলো ভীষণ ‘ফাস্ট’ আউটফিল্ডকে কাজে লাগিয়ে শৌর্যে ভরা সব পুলে সীমানা ছাড়া করেছেন। এ ম্যাচেও ধীরলয়ে শুরু করা তামিমকে যেন তাতিয়ে দিলেন এনগিডি। হতাশা থেকে ফলো থ্রুতে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার একবার বল ছুড়ে মারলেন বাংলাদেশ ওপেনারে দিকে। পরের বলেই এনগিডিকে পুল করে বাউন্ডারি ছাড়া করলেন। শুরুটা যে দলের এত সুন্দর হয়েছে, তাদের স্কোর বড় হওয়া কঠিন কিছু?

কিন্তু সেই জোড়ায় জোড়ায় উইকেট পড়ার রোগ! ওভার দ্য উইকেটে কাজ হচ্ছিল না বলে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলাররা ‘অ্যাপ্রোচ’ বদলালেন। কাজও হলো। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে শর্ট বলে তামিম-সৌম্য দুজনকেই ফেরালেন। ৭৫ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও এগিয়ে এলেন সাকিব-মুশফিক। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তীব্র চাপে ১১৪ রানে অসাধারণ এক জুটি গড়েছিলেন এ দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। আর সাকিব তো একটা নিয়মই বানিয়ে ফেলেছেন, বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিফটি করবেনই! ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ আর এবার—প্রতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিফটি করেছেন।

কথা হচ্ছে, ফিফটির চক্করেই কেন আটকে থাকতে হবে? কেন তিন অঙ্কে রূপ নেবে না দুর্দান্ত ইনিংস? সাকিব-মুশফিক আজ তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েছেন, যেকোনো উইকেটে বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। জুটিটা ২০০ রানও হতে পারত। সেটি হলে নিশ্চয়ই সেঞ্চুরি করে আসতেন সাকিব-মুশফিক।

হয়নি। স্কয়ার লেগ ফাঁকা দেখে সুইপ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বলের লেংথ ঠিকঠাক পড়তে না পারায় বোল্ড, সমাপ্তি ৮৪ বলে ৭৫ রানের ঝকমকে ইনিংসটার। খানিক পরে ৭৮ রান করা মুশফিক ক্যাচ তুলে দিলেন আন্দিলে ফিকোয়াওর শর্ট বল চালাতে গিয়ে।

মুশফিক-সাকিবের দেখিয়ে দেওয়া পথটা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব মোহাম্মদ মিঠুন পালন না করতে পারলেও দুই ‘ম’ মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক দারুণভাবে করেছেন। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এসেছে ৬৬ রান। এ জুটিটাই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ৩৩০ রানের স্কোর। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৮৬ রান।