ভারতের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হলেন নির্মলা সীতারমণ

SHARE

ভারতের নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্মলা সীতারমণ এবার পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ভারতের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হলেন তিনি। মোদি নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে নির্মলা সীতারমণকে সরিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছেন রাজনাথ সিংকে। আর সাবেক কূটনীতিক এস জয়শঙ্করকে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।

গতকাল শুক্রবার ৫৮ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়। বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী হয়েছেন উত্তর প্রদেশ থেকে, ১০ জন। এর পর আছে মহারাষ্ট্র (সাতজন) ও বিহার (ছয়জন)। তিনজন করে মন্ত্রী আছেন গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা ও কর্ণাটক রাজ্য থেকে।

জনপ্রশাসন ও পেনশন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছেন মোদি। মহাকাশ ও পরমাণু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও থাকছেন তিনি। আগের সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা রাজনাথ সিংহ এবার পেয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতীন গড়কড়িকে দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব।

আগের মেয়াদে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নির্মলা সীতারমণ এবার পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হলেন তিনি। এর আগে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন অরুণ জেটলি। এবার অসুস্থতার জন্য তাঁকে বিবেচনা করা হয়নি।

মন্ত্রিসভায় যেসব নতুন মুখ যোগ হয়েছে, তাদের একজন রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক। তিনি পেয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডাকে দেওয়া হয়েছে আদিবাসীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে পরাজিত করার পুরস্কার হিসেবে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন স্মৃতি ইরানি। মন্ত্রিসভার আরেক নতুন মুখ অরবিন্দ সবন্ত। তিনি পেয়েছেন ভারী শিল্প এবং বেসরকারি উদ্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

এদিকে এবারের মন্ত্রিসভায় দুজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এর মধ্যে বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছেন বন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। দেবশ্রী চৌধুরী হয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।

বলা হয়, এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল অমিত শাহর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি এখন নরেন্দ্র মোদির কট্টর হিন্দুত্ববাদী ইস্যুগুলো এগিয়ে নেবেন।

ভারতের রাজনীতিতে অমিত শাহ বিতর্কিত একটি নাম। ২০০৫ সালে গুজরাটে তিনি বিচারবহির্ভূত তিনটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় প্রায় দুই বছর তিনি গুজরাটের বাইরে ছিলেন। তথ্য-প্রমাণের অভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হলে ২০১৪ সালে গুজরাটে ফেরেন তিনি।

ভারতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ‘উইপোকা’ হিসেবে মন্তব্য করে সম্প্রতি নতুন করে সংবাদের শিরোনাম হন অমিত শাহ। কিন্তু মোদির আস্থার জায়গায় অমিত শাহর নাম বরাবরই সবার ওপরে থেকেছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন, ভবিষ্যতে এই অমিত শাহ-ই হবেন মোদির উত্তরসূরি।

শুধু মোদি নন, অমিত শাহর প্রতি অনুগত বিজেপির অন্য নেতারাও। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পর স্মৃতি ইরানি এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘অভিনন্দন অমিত শাহ জি। আপনি বিজেপিকে বিশ্বের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছেন। এখন কাজ করবেন নতুন ভারত গড়ার ক্ষেত্রেও।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার পররাষ্ট্রনীতিতে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে চান মোদি। এ কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন পেশাদার কূটনীতিক এস জয়শঙ্করের হাতে। জয়শঙ্কর একসময় যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। চীনের রাজনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কেও ভালো জানাশোনা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া গত পাঁচ বছর মোদির অন্যতম পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

১৯৮১ সালে কূটনীতি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন জয়শঙ্কর। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী বিভাগের সহসচিব ছিলেন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন যৌথ সচিব। ওই সময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বেসামরিক পরমাণু চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর করেছেন।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার নতুন ‘জলশক্তি’ নামে একটি মন্ত্রণালয় করেছেন মোদি। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। সূত্র : এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।