উঁচু ভবনের নকশা পরীক্ষায় রাজউকের ২৪ দল মাঠে

SHARE

ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন তৈরি করা হয়েছে কি না সেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গতকাল সকাল থেকে সংস্থাটির ২৪টি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভবনগুলোর অবস্থা ও নকশার কাগজপত্র খতিয়ে দেখছে।

দলগুলোর কার্যক্রম তদারক করছেন রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান। গতকাল দুপুরে তিনি গুলশান এলাকায় দলের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর হাইরাইজ ভবনগুলোর তথ্য নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে গুলশান-বনানী এলাকায় অভিযানে নামা রাজউকের দলকে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত চারটি ভবনের তথ্য নিতে দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি ভবন নির্মাণাধীন, যার কাজ নকশা অনুযায়ী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজউক কর্মকর্তারা। দুপুর সোয়া ২টার দিকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ১২ নম্বরে স্টার টাওয়ার নামের ১৬ তলা ভবনে প্রবেশ করে রাজউকের দল। এ ভবনে ৯ বছর ধরে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম চলছে। রাজউকের পরিচালক (জোন-৪) উপসচিব মোহাম্মদ মামুন মিয়ার নেতৃত্বে দলটি ভবন কর্তৃপক্ষের স্টাফদের কাছ থেকে জানতে পারে, ভবনের নকশাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এ মুহূর্তে তাদের কাছে নেই। পরে কাগজপত্র দেওয়া হবে সাব্যস্ত হওয়ার পর বিদায় নেয় রাজউকের দল।

পরে ভবনের কাগজপত্র না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের প্রধান মোহাম্মদ মামুন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ভবনের অনুমোদনসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। এ মুহূর্তে তারা দেখাতে পারছে না। তাদের যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কাগজপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

এর আগে রাজউকের দলটি কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের কনকর্ড, প্রাসাদ, এবিসি নামের তিনটি ভবনে অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে কনকর্ড ভবনটি নির্মাণাধীন। সেটির নকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দল। তবে পাশের এবিসি ভবনটিতে সব কিছু ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি। ভবনটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে ১২ তলার। কিন্তু করা হয়েছে ১৩ তলা। এ ছাড়া প্রাসাদ নামের ভবনটিতে নকশা অনুযায়ী লিফট না করার চিত্র পেয়েছে দল। এ ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেখেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি রাজউক।

গতকাল দুপুরে এই দলের কার্যক্রম দেখতে স্টার টাওয়ারের সামনে আসেন রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান। তিনি দলের সঙ্গে কথা বলার সময়ই ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের একজন আসেন সেখানে। রাজউক চেয়ারম্যান তাঁকে বলেন, ‘আপনারা বাণিজ্যিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন, এর কোনো অনুমোদন আছে?’ ওই ব্যক্তি জানান, অনুমোদন নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কিছু সময় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা চলে যান।

পরে রাজউক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৪টি টিম কাজ করছে। কিছু ব্যত্যয় পাচ্ছে, কিছু ভালো পাচ্ছে। পুরো ফিগার না পেলে বলতে পারব না। যাঁরা ভবন মালিক আছেন তাঁরা টিমকে সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি। ১৫ দিন পর মন্ত্রী মহোদয় জানাবেন। আমরা নাম-ঠিকানাসহ সব জানাতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ অনিয়ম করতে উদ্বুদ্ধ না হন।’

এসব তথ্য নিয়ে কী হবে, এর পর কি কোনো অভিযান হবে—এই প্রশ্নের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযানে নামার জন্যই তো তথ্য নেওয়া হচ্ছে।’ বিধি লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে রাজউক দায় এড়াতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দায়ভার তো কিছু না কিছু নিতেই হবে। তবে প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে লোকবল কম ছিল। এখন অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজউক এখন অনেক শক্তিশালী। এ কারণেই ২৪টি টিম গঠন করা সম্ভব হয়েছে।’ ১৫ দিনে রাজধানীর সব হাইরাইজ ভবনের তথ্য দেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কত সংখ্যক ভবন আছে তার তথ্য আছে। আমরা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’