রোহিঙ্গা সংকটের কথা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না

SHARE

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ ভুলে যাওয়া উচিত নয়— বাংলাদেশের কক্সবাজারে দ্বিতীয়বারের মত সফরে এসে মন্তব্য করেন যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সেক্রেটারি মিস পেনি মরডন্ট। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিস পেনি মরডন্ট প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফরে আসেন ।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এই সংকটের ফলে চাপে থাকা স্থানীয় জনগণের জীবন রক্ষার্থে অপরিহার্য মানবিক সাহায্য প্রদান করছে যুক্তরাজ্য।

নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ক্যাবিনেট মন্ত্রী মিস মরডন্ট। যুক্তরাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মিস মরডন্ট তাঁর বাংলাদেশ সফরে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে ত্রাণ খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে দেখা করেন, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া নারীদের সাথে কথা বলেন, কিভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরা চিকিৎসা পাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেন। উল্লেখ্য, এই সকল কার্যক্রম ইউকে এইড এর সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।

২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকে এইড ১২৯ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। যুক্তরাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মিস মরডন্ট এর এই সফর রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের অন্বেষণ, শিক্ষার জন্য সহায়তা, দক্ষতার উন্নয়ন এবং জীবিকা নির্বাহের সুযোগের উপর গুরুত্বারোপ করে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে মিস মরডন্ট উল্লেখ করেন যে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হলে বার্মাতে যে সকল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সেগুলোর ব্যাপারে তিনি জোর দিবেন। তবে তিনি এও বলেন যে, এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষার্থে স্বল্প মেয়াদী সাহায্য প্রদানের চেয়ে বেশি কিছু ভাবার, তাঁদের নিজেদের ও নিজ পরিবারের টেকসই জীবন নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদানের সময় এসেছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সেক্রেটারি মিস পেনি মরডন্ট বলেন, ইতোমধ্যে এই গুরুতর মানবসৃষ্ট মানবিক সংকটটি ব্যাপক পরিসরে জাতিগত নিধন চালিয়েছে। আমার বার্মা সফরের সময় আমি সেদেশের সরকারকে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছি যেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ফিরে আসতে পারে।

যুক্তরাজ্যের দাতাসংস্থা ইউকে এইড এর সহায়তা ও ব্রিটিশ জনগণের অকৃপণ অনুদান প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর এবং এই সংকটের ফলে চাপে থাকা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের একটি বড় অংশের জীবন রক্ষার্থে মানবিক সাহায্য প্রদান করছে।

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়ে মহান উদারতা ও মানবতা প্রদর্শন করেছে। তবে আমরা অনুধাবন করি যে বাংলাদেশ এই দায়িত্ব একা বহন করতে পারবে না।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ যেন আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে সরে না যায়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এছাড়াও ঢাকায় মিস মরডন্ট আইসিডিডি’বি এর কলেরা ও পানিবাহিত রোগ দূরকরণের চিকিৎসা ও গবেষণা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য আইসিডিডি’বি এর গবেষণা কার্যক্রম ও জীবন-রক্ষার্থে উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছে।

২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্য সরকারের ৫০ লক্ষ পাউন্ড সহায়তা সহ ডিজাস্টার ইমারজেন্সি কমিটি আপিলের মাধ্যমে ব্রিটিশ জনগণের ৩ কোটি পাউন্ড আর্থিক পরিমাণ অকৃপণ অনুদানের ধারাবাহিকতা হিসেবে মিস মরডন্ট এর এই বাংলাদেশ সফর।

যুক্তরাজ্যের এই সহায়তার মাধ্যমে— ৩৫১,৫০০ জন জীবন রক্ষার্থে খাদ্য পেয়েছে। ৩৪,০০০টি পরিবার শোবার বিছানা, কম্বল, পোশাক পরিচ্ছেদ, রান্না ও ধারণের জন্য পাত্র সহ গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেয়েছে। ১২৪,৪০০ জন নিরাপদ পানি ও শৌচাগারের সুবিধা পেয়েছে। ১৯,৫০০টি পরিবার আশ্রয় নির্মাণের সামগ্রী পেয়েছে। ৪২,৩০০ জন চিকিৎসা সেবা তথা যেকোন প্রকার স্বাস্থ্যসেবা লাভ করেছে। নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তথা ২৮,২০০ জন দুঃস্থ মানুষ সুরক্ষা লাভ করেছে।